কালীগঞ্জক্যাম্পাসজানা-অজানাটপ লিড

কালীগঞ্জ মাহতাব উদ্দিন ডিগ্রি কলেজের ৯৯ জন শিক্ষক-কর্মচারি ৪ মাস বেতন পান না

ঝিনাইদহের চোখঃ

অধ্যক্ষ নিয়ে জটিলতায় ৪ মাস বেতন পান না ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার মাহতাব উদ্দিন ডিগ্রি কলেজের ৯৯ জন শিক্ষক-কর্মচারি। সদ্য জাতীয়করণকৃত এই কলেজটির সাময়িক বরখাস্তকৃত অধ্যক্ষ ড. মাহবুবুর রহমানকে তার দায়িত্ব বুঝে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন শিক্ষা অধিদপ্তর। বলা হয়েছে তার সাক্ষর ছাড়া অন্য কোনো স্বাক্ষরে বেতন-ভাতা উত্তোলন করা যাবে না। গত নভেম্বর থেকে তাদের বেতন বন্ধ রয়েছে।

এদিকে শিক্ষা অধিপ্তরের এই নির্দেশের পরও অধ্যক্ষ ড. মাহবুবুর রহমানের দায়িত্ব বুঝে না দেওয়ায় অন্য শিক্ষক-কর্মচারিরা তাদের বেতন-ভাতা উত্তোলন করতে পারছেন না। অভিযোগ রয়েছে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পাওয়া উপাধ্যক্ষ আব্দুল মজিদ মন্ডল নানা অজুহাতে অধ্যক্ষকে দায়িত্ব বুঝে দিচ্ছেন না।

অধ্যক্ষ মাহবুবুর রহমান অভিযোগ করেন, দায়িত্ব বুঝে নিতে কলেজ ক্যাম্পাসে প্রবেশ করলেই ক্যাম্পাস ছেড়ে যেতে বাধ্য করা হয়েছে। এরপরও অধ্যক্ষ মাহবুবুর রহমান ২৪ ফেব্রæয়ারি কলেজে এসে উপস্থিতি খাতায় স্বাক্ষর করে গেছেন, কিন্তু তাকে কলেজের সার্বিক কার্মকান্ডে অংশ নিতে না দিয়ে একই পন্থায় তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানান।

কলেজের একাধিক শিক্ষক নাম প্রকাশ না করে জানান, ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের ধারে ৬ একর জমির উপর ১৯৬৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় মাহতাব উদ্দিন ডিগ্রি কলেজটি। ডিগ্রি, অনার্স, বিএম শাখা মিলিয়ে বর্তমানে প্রায় ৫ হাজার শিক্ষার্থী পড়ালেখা করে। শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারি আছেন ৯৯ জন। কালীগঞ্জ উপজেলার বৃহৎ হওয়ায় ২০১৮ সালে কলেজটি জাতীয়করণ করা হয়েছে। ২০০৮ সালে তত্ববাধয়ক সরকারের সময়ে কলেজটিতে অধ্যক্ষ শুন্য ছিল। ওই বছরের ৩১ জানুয়ারি নিয়োগ দেওয়া হয় ড. মাহবুবুর রহমানকে। তিনি দায়িত্ব পালন করা অবস্থায় ২০০৯ সালে আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসেন। কলেজের সভাপতি নির্বাচিত হন সেই সময়ের জাতীয় সংসদ সদস্য উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুল মান্নান।

শিক্ষকরা আরো জানান, ২০০৯ সালে কলেজের সভাপতি থাকায় আব্দুল মান্নানের সঙ্গে নানা প্রয়োজনে অধ্যক্ষ মাহবুবুর রহমানের সখ্যতা গড়ে ওঠে। এরপর ২০১৪ সালে আওয়ামীলীগ আবারো সরকার গঠন করলে স্থানিয় সাংসদ নির্বাচিত হন আনোয়ারুল আজীম আনার। এই ১৪ সালের অক্টোবর মাসে অধ্যক্ষ মাহবুবুর রহমান হজ্ পালনের উদ্দেশ্যে সৌদি যান। ঠিক সেই সময়ে ২০১৪ সালের ৩০ অক্টোবর শিক্ষকদের সঙ্গে খারাপ আচরন, আত্মিয়করন, কাউকে না জানিয়ে পুকুর বন্দোবস্ত দেওয়া, আদালতের নির্দেশনা অমান্যসহ ১৩ টি অভিযোগ এনে অধ্যক্ষ মাহবুবুর রহমানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। দায়িত্ব পান উপাধ্যক্ষ আব্দুল মজিদ মন্ডল। এ সময় কলেজের সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন বর্তমান সাংসদ আনোয়ারুল আজীম আনার।

শিক্ষকরা আরো জানান, প্রথমদফা ১৩ টি অভিযোগ এনে অধ্যক্ষকে বহিষ্কার করলেও পরবর্তীতে অনার্স ভবন নির্মানে ১৫ লাখ টাকা আত্বাসাত করা হয়েছে বলে আরেকটি অর্থনৈতিক অভিযোগ নিয়ে আসা হয়। এরপর থেকে চলছে একাধিক দপ্তরের তদন্ত। অধ্যক্ষ মাহবুবুর রহমান তার বিরুদ্ধে নিয়ে আসা অভিযোগগুলো মিথ্যা প্রমানের জন্য জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের একাধিক তদন্তের মুখোমুখি হন। পরে প্রমান হয়েছে অভিযোগগুলো মিথ্যা। তারপরও অধ্যক্ষের দায়িত্ব বুঝে না দেওয়ায় বর্তমানে তাদের বেতন বন্ধ রয়েছে।

এক শিক্ষক জানান, বেতন না পেয়ে ধার-বাকিতে সংসারের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে কিনতে এখন আর কেউ বাকি দিচ্ছেন না। তারাও নিশ্চিত করে কাউকে বলতে পারছেন না কবে তাদের বেতন হবে, কবে দেনা দিতে পারবেন।
অধ্যক্ষ ড. মাহবুবুর রহমান জানান, তিনি কোনো অন্যায় বা দুর্নীতি করেননি। শুধুমাত্র রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় তাকে অদ্যবদি হয়রানী করা হচ্ছে। তিনি দেশের বাইরে থাকা অবস্থায় সকল নিয়ম লংঘন করে সেই সময়ের পরিচালনা কমিটি তাকে সাময়িক বরখাস্ত করেন। তারা অর্থ আত্বাসাত সহ যতগুলো অভিযোগ নিয়ে এসেছিল তার সবগুলো জাতীয় বিশ^বিদ্যালয় ও শিক্ষা অধিদপ্তরের একাধিক তদন্তে মিথ্যা প্রমানিত হয়েছে। এরপর তিনি দায়িত্ব বুঝে নিতে গেলে তাকে বাঁধা প্রদান করা হয়েছে। অধিদপ্তর থেকে দায়িত্ব বুঝে দিতে বার বার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু স্থানিয় ভাবে সেই নির্দেশ অমান্য করা হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত দায়িত্ব বুঝে না দেওয়ায় বৈধ অধ্যক্ষের স্বাক্ষর না থাকলে কলেজের কারো বেতন-ভাতা উঠানো যাবে না এমন নির্দেশ আসে। এরপরও তার দায়িত্ব বুঝে দেওয়া হচ্ছে না। তিনি বার বার দায়িত্ব বুঝে নিতে গেলে সন্ত্রাসী লেলিয়ে দিয়ে ক্যাম্পাস থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন। তারপরও তিনি কৌশলে ২৪ ফেব্রæয়ারি কলেজের শিক্ষক উপস্থিতি খাতায় স্বাক্ষর করেছেন।

অধ্যক্ষ মাহবুবুর রহমান আরো জানান, উপাধ্যক্ষ আব্দুল মজিদ মন্ডল ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের পরিচয় দিচ্ছেন। এই দায়িত্বে থেকে কলেজের একাডেমিক কাজকর্ম করে যাচ্ছেন, যা সম্পূর্ণ অবৈধ। এগুলো তিনি করতে পারেন না। জাতীয় বিশ^বিদ্যালয় ও শিক্ষা অধিদপ্তর একাধিক চিঠিতে জানিয়ে দিয়েছেন তিনিই বৈধ অধ্যক্ষ।

মাহবুবুর রহমান জানান, বর্তমানে অনার্স বিভাগসহ অন্যান্য বিভাগ থেকে কলেজের নিজস্ব মোটা অংকের আয় রয়েছে। যা দিয়ে কলেজের উন্নয়নের পরিবর্তে মামলা-মকদ্দমায় ব্যয় করা হচ্ছে।

এ ব্যাপারে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালনে থাকা আব্দুল মজিদ মন্ডল জানান, মাহবুবুর রহমান পুণঃবহালের যে নির্দেশ পেয়েছিলেন সেটা পরবর্তীতে স্থগিত করা হয়েছে। তাছাড়া তাকে কলেজে আসতে দেওয়া হচ্ছে না এটাও ঠিক নয়। সন্ত্রাসী দিয়ে তাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে অভিযোগটি মিথ্যা।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button