পাঠকের কথা

বঞ্চিত কৃষক, উন্নয়নের মানদন্ড কি?—সবুর মিয়া

ঝিনাইদহের চোখঃ

বাংলাদেশের নামের সঙ্গে যে মানুষগুলো নিবিড়ভাবে সম্পর্ক তারা হলো কৃষক। আমাদের দেশের উন্নয়নের চালিকাশক্তি, অর্থনীতির সূতিকাগার। আমাদের এই দেশকে বলা হয় কৃষি প্রধান দেশ, এই দেশের জনসংখ্যার ৪০ ভাগেরও অধিক মানুষ সরাসরি কৃষি কাজের সাথে সম্পৃক্ত। কৃষির উপর নির্ভরতা দেশের ও দেশের মানুষের বহু পূর্ব থেকে সম্পর্কিত। সেই কৃষকরা আজ অধিকার বঞ্চিত!

আমাদের দেশ অর্থনৈতিকভাবে সামনের দিকে এগিয়ে চলছে তার মূল শক্তি এদেশের কৃষক। অতি পরিতাপের বিষয় কৃষকরা আজ বড়ই লাঞ্চিত, বঞ্চিত ও অসহায় । কৃষক যে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক চালিকা শক্তি এটা আমরা মুখে স্বীকার করলেও তাদের অধিকার নিয়ে আমরা কাজ করি না, তার বাস্তব দৃষ্টান্ত, বাস্তব চিত্র এখন আমাদের সামনে।

কৃষকের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফসল হচ্ছে ধান যা খেয়ে এদেশের ১৮ কোটি মানুষ জীবন ধারণ করে, সেই ধান তারা উৎপাদন করেছে দিনরাত ২৪ ঘন্টা অমানবিক পরিশ্রম ও অর্থ ব্যয় করে কিন্তু পরিতাপের বিষয় পাচ্ছে না তাদের ন্যায্য অধিকার।

অতি ক্ষুদ্র কিন্তু শক্তিশালী মধ্যস্বত্বভোগী সিন্ডিকেট কৃষককের অধিকারের উপর হস্তক্ষেপ করেছে, তাদেরকে বঞ্চিত করেছে করছে সর্বহারা দারিদ্র, মধ্যস্বত্বভোগীদের কাছে কৃষকরা আজ নিঃশেষ সর্বস্বান্ত পাচ্ছে না তাদের নায্যা অধিকার। গত পাঁচ বছরে দেশের কৃষি খাতে যে উন্নতি অগ্রগতি সাধিত হয়েছে তার অগ্রভাগের ভূমিকা ছিল কৃষক কিন্তু সেটা কেউ মনে রাখেনি । আমাদের প্রধান উৎপাদনকারী ফসল গুলোর মধ্যে- ধান, পাট, গম, ভুট্টা, আলু সহ অন্যান্য সবজি দেশের বাইরে ব্যাপক চাহিদা অর্থাৎ রপ্তানীযোগ্য ভালো দামও পাচ্ছে কিন্তু কৃষকরা এক মণ ধান বিক্রি করে একটা ধান কাটা কামলার দাম পরিশোধ করতে পারছে না।

বাংলার কৃষক প্রতিবাদের ভাষা হিসেবে পাকা ধান ক্ষেতে আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে, সরকার শুধু আশার বাণী দিচ্ছে, আশায় আশায় আর কত দিন। আমাদের দেশের মোট জিডিপির ১৪ দশমিক ১০% অবদান কৃষকের। সেই কৃষকের প্রতি কেন এত অবহেলা, কৃষক যদি বঞ্চিত হয় তাহলে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের মানদন্ড কি?

বাংলাদেশের আবাদযোগ্য কৃষি জমির পরিমাণ পঁচাশি লক্ষ হেক্টর এর বেশি, এত ব্যাপক কৃষি জমি সবটুকুই বাংলাদেশে বসবাসকারী কৃষকরা চাষাবাদ করে অতি সফলতার সাথে ফসল উৎপাদন করে থাকে কিন্তু তার মূল্যায়ন কি পাচ্ছে?

অথচ আমাদের দেশে শিল্প কলকারখানাই বড় বড় পদগুলোতে বিদেশিদের চাকরি দিয়ে দেশের টাকা বাইরে চলে যাচ্ছে! আর এক শ্রেণীর মুনাফাভোগী ব্যবসায়ীরা বিদেশ থেকে পণ্য এনে এদেশের বাজারকে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে আমাদের কৃষি ও কৃষককে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দেওয়ার অপচেষ্টা চালিয়ে চালিয়ে যাচ্ছে।

আমাদের দেশের কৃষকরা কি নির্বাক থাকবে নাকি তাদের অধিকার আদায়ের সংগ্রাম করবে। কেনই বা সংগ্রাম করবে? বাংলাদেশের কৃষক ১৯৭১ সালে সংগ্রাম করে এদেশের স্বাধীনতা অর্জনে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেছিল। কৃষককের দাবি আদায়ের অধিকার এখন বাংলাদেশের জাতীয় দাবিতে পরিণত হয়েছে।

এদেশের নাগরিক হিসেবে মনে রাখতে হবে আমাদের মুখে অন্ন তুলে দেওয়ার কাজটি কিন্তু এদেশের সাধারন কৃষকেরাই করে থাকে। তারাই এদেশের মানুষের সবচেয়ে আপন মানুষ, এ ভূ-খন্ডে তাদের অধিকার অর্জিত হোক এই দাবি আজ সমগ্র জাতির।

মোঃ সবুর মিয়া
E-mail: sabur2050@gmail.com

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button