নির্বাচন ও রাজনীতি

নির্বাচনে বাড়ছে ব্যাংক লেনদেন, সতর্ক থাকার পরামর্শ

ঝিনাইদহের চোখঃ

একাদশ সংসদ নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে, ভোটের মাঠে উত্তাপ ততই বাড়ছে। নির্বাচনী খেলায় কে জিতবে, কে হারবে তা এখনও নিশ্চিত নয়। তবে হার ঠেকাতে নানা কৌশল নিয়েছে দল বা প্রার্থীরা। গণসংযোগ, মতবিনিময় মিছিল-মিটিং আর চায়ের দোকানে আড্ডায় সরগরম পাড়া-মহল্লা। কর্মীদের নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণার খরচপাতি জোগানে টাকার ছড়াছড়ি এখন দেশ জুড়ে। তাই নির্বাচনকে সামনে রেখে ব্যাংকিং খাতে বেড়ছে লেনদেন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নির্বাচন আসলে প্রার্থীদের খরচ বাড়ে, তাই ব্যাংকে নগদ টাকার প্রবাহ বাড়বে -এটাই স্বাভাবিক। তবে ব্যাংকিং খাত যাতে কোনোভাবেই সন্ত্রাসে অর্থায়নের কাজে ব্যবহৃত না হয় সে বিষয়ে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে। এ ক্ষেত্রে নজরদারি বাড়ানো জরুরি।

এছাড়া ডিসেম্বর মাসে ব্যাংকগুলো তাদের হিসাব ক্লোজিং করবে। তাই চূড়ান্ত হিসাব ভালো করতে সব ব্যাংকই ঋণ আদায়ের ওপর জোর দেবে। এ কারণেও লেনদেন বাড়বে।

এদিকে সহজে দ্রুত সময়ে অনলাইন ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে লেনদেন সুবিধা দিচ্ছে রিয়েল টাইম গ্রস সেটেলমেন্ট (আরটিজিএস)। গত কয়েক মাস ধরে আরটিজিএসের লেনদেন ধারাবাহিক বাড়ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য মতে, চলতি বছরের নভেম্বর শেষে তাৎক্ষণিক এ লেনদেন নিষ্পত্তি ব্যবস্থায় পরিশোধ হয়েছে এক লাখ ৮ হাজার ৪৩২ কোটি টাকা। যা তার আগের মাসের (অক্টোবর) তুলনায় ২২ হাজার ৬৬০কোটি টাকা বেশি। অক্টোবরে আরটিজিএসে পরিশোধ হয়েছিল ৮৬ হাজার ১৭২ কোটি টাকা। আর সেপ্টেম্বরে লেনদেন ছিল ৬২ হাজার ২৫৮ কোটি টাকা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, নির্বাচন আসলে প্রার্থীদের খরচ বাড়ে, এ জন্য ব্যাংকের লেনদেন বাড়বে এটাই স্বাভাবিক। তবে ডিসেম্বর মাসে ব্যাংকগুলোর লেনদেন সব সময় বেশি থাকে। এর মূল কারণ এ মাসে ব্যাংকের হিসাব ক্লোজিং করতে হয়।

তিনি বলেন, বর্তমানে ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ (এনপিএল) প্রায় সাড়ে ১১ শতাংশ। এটি যে কোনো মূল্যে ১০ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনতে সব ব্যাংকের প্রতি নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর আলোকে ঋণ আদায় বা পুনঃতফসিল করলে ব্যাংকের লেনদেন বাড়বে।

তিনি আরও বলেন, প্রতি বছর প্রতিটি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় থেকে শাখাগুলোকে আমানত সংগ্রহ ও ঋণ আদায়ে একটি টার্গেট দেয়া হয়। সব মিলিয়ে ব্যাংকের বার্ষিক চূড়ান্ত হিসাব ভালো করতে ঋণ আদায় বাড়লে লেনদেনও বাড়বে। তবে নির্বাচনের সুযোগে অবৈধ ও সন্ত্রাসী কাজে অর্থ লেনদেন যেন না হয় সে বিষয়ে ব্যাংকারদের সতর্ক থাকতে হবে।

এদিকে নির্বাচনকে সামনে রেখে নগদ অর্থ উত্তোলন বেড়ে যাবে, এ জন্য আগে থেকেই বিশেষ সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশে দিয়েছে বাংলাদেশ আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট (বিএফআইইউ)। ব্যাংকের শাখা ও মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের মাধ্যমে অর্থ উত্তোলনের ক্ষেত্রে তদারকি ব্যবস্থা জোরদার করতে এ নির্দেশনা দিয়েছে সংস্থাটি।

ব্যাংকগুলোর কাছে বিএফআইইউ প্রধান আবু হেনা মোহা. রাজী হাসানের পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, ব্যাংক যাতে কোনোভাবেই সন্ত্রাসী অর্থায়নের কাজে ব্যবহৃত না হয় বা কোনো সন্ত্রাসী যেন ব্যাংকের মাধ্যমে লেনদেন করতে না পারে, সেদিকে সর্বোচ্চ সতর্ক নজর দিতে হবে। নিয়ম মেনে হিসাব খোলা ছাড়া কোনো ধরনের লেনদেন করা যাবে না। সংবেদনশীল এলাকার ব্যাংক শাখার লেনদেনে বিশেষ তদারকি করতে হবে। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে সন্ত্রাসী কাজে যুক্ত কোনো ব্যক্তির লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেলে তা বিএফআইইউকে জানাতে হবে। এ ছাড়া অনলাইনের মাধ্যমে ঝুঁকিপূর্ণ কোনো লেনদেন হচ্ছে কি না, তা খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।

এ বিষয়ে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সভাপতি ও ঢাকা ব্যাংকের ব্যাবস্থাপনা পরিচালক (এমডি ) সৈয়দ মাহবুবুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, নির্বাচনে প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণাসহ, চা পানের খরচ বাড়ে। বিভিন্ন সভা সমাবেশ হয়, ফলে লেনদেনও বাড়ে, এটা স্বাভাবিক। সব দেশেই নির্বাচনের সময় নগদ টাকার লেনদেন বাড়ে। এছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ বা সন্দেহজনক লেনদেনের ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো সব সময় সতর্ক রয়েছে বলে জানান তিনি।

এদিকে মতিঝিল সোনালী ব্যাংকের স্থানীয় কার্যালয়ের মহাব্যবস্থাপক নিজাম উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, এখন পর্যন্ত ব্যাংকের লেনদেন স্বাভাবিক আছে। নির্বাচন উপলক্ষে নগদ টাকার লেনদেন বেশি হয়। এছাড়া আগামী সপ্তাহে ব্যাংক ক্লোজিং ও টানা চারদিন ছুটি আছে। সব মিলিয়ে সামনে লেনদেন বাড়বে। তবে লেনদেনের বাড়তি চাপ আসলেও কোনো সমস্যা হবে না।

অপরদিকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে টানা চার দিনের ছুটির ফাঁদে পড়ছে দেশের ব্যাংকিং খাত। সাপ্তাহিক ছুটি, নির্বাচনের জন্য সাধারণ ছুটি ও ব্যাংক হলিডে মিলিয়ে ২০১৮ সালের শেষ ৪ দিন দেশের সব ব্যাংকে লেনদেন বন্ধ থাকবে। ছুটি শেষে আগামী ১ জানুয়ারি ব্যাংক খুলবে। এ কারণে আগামী ২৭ ডিসেম্বর (বৃহস্পতিবার) মধ্যে চলতি বছরের ব্যাংকের বার্ষিক হিসাব চূড়ান্ত করতে নির্দেশনা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button