জানা-অজানাটপ লিডমহেশপুর

মহেশপুরে অবৈধ ১৩ ভাটায় পুড়বে ৯ লাখ মন কাঠ

ঝিনাইদহের চোখঃ

ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলা শহর সংলঘ্ন জলিলপুর এলাকায় রয়েছে র‌্যাডো ব্রিকস্। ব্যারেল চিমনি এই ইটের ভাটায় মজুদ করা হয়েছে শত শত মন কাঠ। ইতিমধ্যে ইট পোড়ানোর কাজ শুরু হয়েছে, আর এই কাজে ব্যবহার হচ্ছে মজুদ করা ওই কাঠ। একই এলাকায় আছে জুয়েল ব্রিকস্ নামের আরেকটি ফিক্সড চিমনি’র ভাটা। সেটাতেও পোড়ানো হচ্ছে শত শত মন কাঠ।

শুধু এই দুইটি ভাটাই নয়, ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলায় এ জাতীয় ১০ টি অবৈধ ইটের ভাটাই বছরে কমপক্ষে ৬ লাখ মন কাঠ পোড়ানো হবে। এছাড়ও ৩ টি ফিক্সড চিমনি’র ভাটাতেও পুড়বে ৩ লাখ মন কাঠ। আইনের কোনো তোয়াক্কা না করেই প্রকাশেই এই সকল ভাটাগুলো কাঠ মজুদ করেছেন এবং তা জ্বালানী হিসেবে ব্যবহার করে যাচ্ছেন। অথচ ইটের ভাটায় কাঠ পোড়ানো যাবে না, সরকারের এমন কঠোর আইন রয়েছে।

সরেজমিনে বেশ কয়েকটি ভাটা ঘুরে দেখা গেছে শত শত মন কাঠ মজুদ করা রয়েছে। ভাটার চিমনিতে ধুয়া বের হচ্ছে, আর পুড়ছে কাঠ। উপজেলার নেপা মোড়ে রয়েছে সোহাগ ব্রিকস্। ব্যারেল চিমনি’র এই ভাটার চারিদিকে কয়েকশত মন কাঠ রয়েছে। শ্রমিকরা জ্বালানী হিসেবে এই কাঠ ব্যবহার করছেন। একই এলাকায় রয়েছে মাছুম ব্রিকস্, সেখানেও কাঠ পুড়ানো হচ্ছে।

এছাড়া খোসালপুরে রয়েছে ব্যারেল চিমনি’র ভাই ভাই ব্রিকস্, তারাও পোড়াচ্ছেন কাঠ। ব্যারেল চিমনি’র আরো কয়েকটি ব্রিকস্ রয়েছে। তারাও কাঠ পোড়াচ্ছেন। স্থানিয়দের সঙ্গে কথা বলে জানাগেছে, নস্তিতে শাকিল ব্রিকস্, শ্যামকুড়ে এস.বি.এম ব্রিকস্, গাড়াবাড়িয়া এলাকায় রিপন ব্রিকস্, কুসুমপুর এলাকায় এম.এ.আর ব্রিকস্ কর্তৃপক্ষও প্রতিদিন শত শত মন কাঠ পোড়াচ্ছেন।

মহেশপুরে এছাড়া আরো কয়েকটি ব্যারেল চিমনি’র ভাটা রয়েছে। পাশাপাশি তিনটি ফিক্সড চিমনি’র ভাটা রয়েছে। যার মধ্যে জুয়েল ভাটায় প্রচুর পরিমানে কাঠ মজুদ দেখা গেছে। একই ভাবে যাদবপুরের বাহার ব্রিকস্ ও পদ্মপুকুরের রাফি ব্রিকস্ এ কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। এ সকল ভাটার কোনো অনুমোদন নেই বলে জানিয়েছেন ভাটা মালিকদের একটি সুত্র। তাদের ভাষায় জিকজ্যাক ভাটা ছাড়া অন্য কোনো ভাটার অনুমোদনের সুযোগ নেই। সরকার ব্যারেল বা ফিক্সড চিমনি’র কোনো ভাটার অনুমোদন দিচ্ছে না।

ভাটা মালিকদের একজন নাম প্রকাশ না করে জানান, তারা জিকজ্যাক ভাটা পরিচালনা করেন। এই ভাটায় কয়লা ব্যবহার হয়ে থাকে। জিকজ্যাক ভাটায় ইট পোড়ানোর খরচ একটু বেশি হওয়ায় অনেকে করতে চান না। কিন্তু এতে পরিবেশের মারাত্বক ক্ষতি হচ্ছে। তিনি আরো জানান, ব্যারেল বা ফিক্সড চিমনি’র ভাটার চেয়ে জিকজ্যাক ভাটায় ইট পোড়াতে তাদের ইট প্রতি ২ টাকা অতিরিক্ত খরচ হয়। এতে তারা ব্যবসায়ী ভাবেও ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। কম টাকায় ইট তৈরী করে তারা কম টাকায় বিক্রি করছেন, আর তারা ওই টাকায় বিক্রি করতে গিয়ে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছেন।

ভাটাগুলোতে ইট পোড়ানোর সঙ্গে যুক্ত একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানাযায়, প্রতিটি ভাটায় এক বছরে ৫৫ থেকে ৬০ হাজার মন কাঠ পুড়বে। এই হিসাবে ব্যারেল চিমনি’র ১০ ভাটায় পুড়বে প্রায় ৬ লাখ মন কাঠ। আর তিনটি ফিক্সড চিমনি’র ভাটায় পুড়বে আরো ৩ লাখ মন মাঠ। এ হিসাবে এ বছর মহেশপুরে অবৈধ ১৩ ভাটায় প্রায় ৯ লাখ মন কাঠ পোড়ানো হবে।

স্থানিয়রা বলছেন, ভাটা মালিকরা ইতিমধ্যে তাদের ভাটাগুলোতে শত শত মন কাঠ মজুদ করছেন। অনেকে বাইরে থেকে কাঠ কেটে নিয়ে আসছেন, আবার অনেকে ভাটার মধ্যেই কেটে ব্যবহার উপযোগি করে নিচ্ছেন। অবৈধ এই সকল ভাটাগুলো চলছে শুধু তাই নয়, পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। যে কাঠ সংগ্রহ করতে তারা পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষাকারী মুল্যবান গাছগুলো কেটে সাবাড় করছেন।

ভাটায় কাঠ সরবরাহ করেন এমন একজন গোলাম সরোয়ার জানান, বছরের এই সময় তাদের মূল কাঠের ব্যবসা। যার সিংহভাগই ইটের ভাটাই। তিনি আরো জানান, সারা বছর তারা ভাটা মালিককে কাঠ দিয়ে থাকেন। বিভিন্ন গ্রামাঞ্চল থেকে এই কাঠ সংগ্রহ করেন। এরপর ভাটায় ব্যবহার উপযোগি কের সরবরাহ করে। এভাবে গাছ কাটা ক্ষতিকর জেনেও জীবন-জীবিকার প্রয়োজনে করেন বলে তিনি উল্লেখ করেন।

এ বিষয়ে র‌্যাডো ব্রিকস্ এর মালিক আব্দুর রহমানের সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান, শুধু কাঠ নয় মাঝে মধ্যে ময়লাও পুড়িয়ে থাকেন। এভাবে কাঠ পোড়ানো ঠিক কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন সবাই করছে তাই তিনিও করছেন। ফিক্সড চিমনি’র জুয়েল ভাটার মালিক মশিয়ার রহমান জানান, আগামী বছর তিনি জিকজ্যাক ভাটা করবেন। এ বছর এভাবে চালানো ছাড়া উপায় নেই।

বিষয়টি নিয়ে মহেশপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের দায়িত্বে থাকা সহকারী কমিশনার (ভুমি) সুজন সরকার জানান, দ্রুত এ বিষয়ে তারা ব্যবস্তা গ্রহন করবেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button