টপ লিডমহেশপুর

ঝিনাইদহ ইছামতি নদী দখল করে মাছ চাষ করছেন প্রভাবশালী

ঝিনাইদহের চোখঃ

ভারত সীমান্ত নদী ইছামতি।

যে নদীটি এলাকার মানুষ মাছ ধরা থেকে শুরু করে নানা কাজে ব্যবহার করেন। নদী পাড়ের হালদার সম্প্রদায়ের মানুষগুলো এই নদী থেকে মাছ ধরে বিক্রি করে তাদের জীবন চালান। সেই নদীতে হঠাৎ করে স্থানিয় এক প্রভাবশালীর বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ শুরু করেছেন। ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার শ্রীনাথপুর গ্রামের নিচ দিয়ে বয়ে যাওয়া ইছামতি নদীতে এই বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ শুরু করা হয়েছে।

স্থানিয়রা বলছেন, বছরের পর বছর এই নদীর সরকারি জায়গা জনসাধারণের জন্য উন্মক্ত ছিল। গ্রামের মানুষ নদীর পানিতে গোসল থেকে শুরু করে বাচ্চারা লাফালাফিও করতো। এখন বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করার কারনে কাউকে সেখানে নামতে দেওয়া হচ্ছে না। নদীর পানিতে গোসল করা যাবে না বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। হালদারদের মাছ ধরারও কোনো সুযোগ নেই।

শ্রীনাথপুর গ্রামের একাধিক ব্যক্তি জানান, তাদের গ্রামের নিচ দিয়ে ইছামতি নদী বয়ে গেছে। নদীটি ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করে আবার ভারতে চলে গেছে। এই গ্রামেই রয়েছে বিজিবি’র শ্রীনাথপুর ক্যাম্প। ক্যাম্পের নিচে বাঁধ দেওয়া হয়েছে। বাঁধটি দিয়েছেন শ্রীনাথপুর গ্রামের তোফাজ্জেল হোসেনের পুত্র শরিফুল ইসলাম। গত ১০ দিন হলো তিনি গঠাৎ করে ওই নদীর মাঠপাড়া ও হালদারপাড়া এলাকায় দুইটি বাঁধ দেন। মাঝে আনুমানিক ৫০ থেকে ৬০ বিঘা জলাকার এই বাঁধ দিয়ে আটকে ফেলেন। আর এক সপ্তাহ হলো সেই আটকে ফেলা জলাশয়ে তিনি মাছ ছেড়েছেন।

স্থানিয়রা বলছেন তারা নানা ভাবে বাঁধা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। শ্রীনাথপুর ছাড়াও পাশ^বর্তী শ্যামকুড় গ্রামের মানুষ এই নদী নানা প্রয়োজনে ব্যবহার করেন। তাই দখলকারীকে বাঁধ না দেওয়ার জন্য তারা অনুরোধ করেছেন। কিন্তু কোনো অনুরোধই কাজে লাগেনি।

হালদারপাড়ার সাধন হালদার জানান, তারা প্রায় ১৭ টি পরিবারে শতাধিক মানুষ এই নদীর পাড়েই বসবাস করেন। এছাড়াও গ্রামে আরো হালদার সম্প্রদায় রয়েছে। যারা এই নদীতে মাছ ধরে বিক্রি করেন। এই মাছ বিক্রির মাধ্যমে তাদের সংসার চলে। এই বাঁধ দেওয়ার কারনে তারা আর নদীতে নামতে পারছেন না। তিনি বলেন, শরিফুল ইসলামের এক ভাই স্থানিয় ইউপি সদস্য। যে কারনে শরিফুল কোনো কিছুই মানতে চান না। তাদের সমস্যার কথাগুলো বলেছেন, কিন্তু তিনি গুরুত্ব দেননি। বিষয়টি নিয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন হালদার সম্প্রদায়ের মানুষগুলো। হালদাররা জানান, ‘জাল যার-জল তার’ এটা সরকারের শ্লোগান। সেখানে জেলেদের বঞ্চিত করে নদী দখল করে প্রভাবশালী মাছ চাষ করছেন।

এ বিষয়ে দখলকারি শরিফুল ইসলামের সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান, নদীতে এখন পানি কম। তিনি খাবার জন্য কিছু মাছ ছেঢ়ে বড় করছেন। এটা তিনি শুনে করেছেন, কিন্তু কাদের কাছে শুনেছেন তা বলতে চাননি। তিনি নিজের ঘাড়ে দোষ নিয়ে বিষয়টির দিকে একটু খেয়াল রাখার অনুরোধ করেন। নদীতে মানুষের নামতে নিশেধ এটা ঠিক নয় বলে জানান।

শ্যামকুড় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ আমান উল্লাহ জানান, তিনি ঘটনাটি শুনেছেন। তবে আওয়ামীলীগের সম্মেলন নিয়ে একটু ব্যস্ত আছেন। তবে দ্রুতই খোজ নিয়ে দেখবেন বলে জানান।

মহেশপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) সুজন সরকার জানান, বিষয়টি তিনি অবগত নন। তবে খোজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button