ক্যাম্পাসটপ লিডহরিনাকুন্ডু

হরিনাকুন্ডু আলিম মাদ্রাসায় হাটু পানি মাড়িয়ে ক্লাসে যান শিক্ষার্থীরা

ঝিনাইদহরে চোখঃ

জেডিসি পরীক্ষা আর মাত্র ১৩ দিন পর। শিক্ষকরা এখন থেকেই প্রস্তুতি নিচ্ছেন পরীক্ষা কেন্দ্রের মাঠের পানি অপসারনের।

স্যালো মেশিন লাগিয়ে তাদের এই পানি সরাতে হবে, তবেই উপজেলার একমাত্র জেডিসি পরীক্ষা কেন্দ্রে ৩৯০ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিতে পারবে। এই অবস্থা ঝিনাইদহ হরিনাকুন্ডু উপজেলার হরিনাকুন্ডু আলিম মাদ্রাসা মাঠের। যেখানে গোটা বর্ষা মৌসুম জুড়ে হাঁটু পানি জমে থাকে। বাচ্চারা প্যান্টগুটিয়ে ক্লাসে যায়।

শিক্ষকরা বলছেন, তারা সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে ছুটেছেন মাঠে একটু মাটি ভরাটের জন্য, কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। মাত্র ২ লাখ টাকার মাটি ভরাট কাজ করলেই তাদের এই অবস্থার অবসান হতো। কিন্তু তাদের এই দাবি সকলেই শুনে গেছেন, আশ্বাসও দিয়েছেন, কিন্তু কাজ করেননি। শিক্ষকরা নিজেরা মাটি দিয়ে যাতায়াতের পথ তৈরী করে নিয়েছেন। তারপরও অনেক সময় এই পথও চলে যায় পানির নিচে।

সরেজমিনে হরিনাকুন্ডু আলিম মাদ্রাসা ঘুরে দেখা গেছে গোটা মাঠেই পানি আর পানি। ভবনগুলোর বারান্দার নিচেই পানি। অনেক স্থানে জঙ্গল হয়ে গেছে। মাঠ দেখলে মনে হবে মাছ চাষের জন্য পুকুর খোড়া হয়েছে।

মাদ্রাসাটির অধ্যক্ষ মোঃ জামিরুল ইসলাম জানান, হরিনাকুন্ডু পৌরসভা এলাকা ও শহর সংলঘœ এলাকায় কোনো মাদ্রাসা ছিল না। তখন এলাকার কিছু মানুষ একটি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন। তখন পৌর এলাকায় জমি পাওয়া কষ্টকর হয়ে পড়ে। ১৯৯৫ সালে পৌরসভা এলাকার ৭ নম্বর ওয়ার্ডে হরিনাকুন্ডু মৌজায় তারা ৭৫ শতক জমি ক্রয় করেন। ওই বছরই ওই জমিতে মাদ্রাসা প্রতিষ্টা করেন। প্রথম পর্যায়ে ৫ কক্ষের একটি টিনসেড ঘর দিয়ে তারা যাত্রা শুরু করেন। পরে শিক্ষার্থী অনেক হওয়ায় ৪ কক্ষের আরো একটি টিনসেড ঘর করেন। এই দুইটি ঘরের ৯ টি কক্ষে চলছিল তাদের শিক্ষা কার্যক্রম। দাখিল পর্যন্ত পাঠদান করতেন তারা।

অধ্যক্ষ মোঃ জামিরুল ইসলাম আরো জানান, ২০১০ সালে তাদের প্রতিষ্ঠান এমপিও ভুক্ত হয়। এ সময় তাদের প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক ছিলেন ১৫ জন, আর কর্মচারি ৩ জন। শিক্ষার্থী ছিল ৪ শতাধিক। তিনি আরো জানান, ২০১০ সালে তাদের প্রতিষ্ঠান দাখিল পর্যন্ত এমপিও ভুক্ত হলেও ২০০৮ সাল থেকে তারা আলিম পর্যন্ত পাঠদানের অনুমতি পেয়েছেন। সেই থেকে শিক্ষার্থীদের আলিম পর্যন্ত পাঠদান করাছেন। ২০১০ সালে প্রথম তাদের প্রতিষ্ঠান থেকে আলিম পরীক্ষায় শিক্ষার্থীরা অংশ নেন। বর্তমানে তাদের প্রতিষ্ঠানে ৪৩৭ জন ছেলে-মেয়ে পড়ালেখা করছে।

মাদ্রাসার অধ্যক্ষ জামিরুল ইসলাম জানান, ২০০৩ সাল থেকে তাদের প্রতিষ্ঠানে তিনটি বোর্ড পরীক্ষা হয়ে থাকে। এগুলো হচ্ছে জেডিসি, দাখিল ও কামিল। হরিনাকুন্ডু উপজেলায় এই পরীক্ষাগুলোর একটিই কেন্দ্র, সেটা তাদের প্রতিষ্ঠান। এভাবে পানি-কঁদার মধ্যে কষ্ট করে তাদের পরীক্ষা নিতে হয়। যা খুবই দুঃখজনক।

মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি কামরুল আবেদীন জানান, মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠার সময় উচু জায়গা না পেয়ে কিছুটা নিচু জায়গায় মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। এরপর চারিপাশের বসতিরা বাড়িঘর করার সময় মাটি ভরাট করে তাদের জায়গা উচু করেছে। এতে মাদ্রাসা আরো নিচু জায়গায় হয়ে গেছে। এই অবস্থায় বছরের বেশির ভাগ সময় মাঠে পানি জমে থাকে। বাচ্চাদের কষ্ট করে ক্লাসে যেতে হয়।

এ বিষয়ে আলিম প্রথম বর্ষের ছাত্র নাইমুর রহমান জানান, তারা মাঝে মধ্যে প্যান্ট গুটিয়ে ক্লাসে প্রবেশ করেন। এছাড়া পড়ালেখার পাশাপাশি মাঠে খেলাধুলা করবেন সেই সুযোগ একেবারেই নেই। তিনি আরো বলেন, বিদ্যালয়ে লাইনে দাড়িয়ে জাতীয় সংগীত পাঠ করানো হয় ভবনের ধার দিয়ে লম্বা হয়ে দাড়িয়ে। মাঠে নামার মতো কোনো পরিবেশ নেই।

স্থানিয় বাসিন্দা মন্টু মল্লিক জানান, সরকারি এতো টাকা বিভিন্ন ভাবে ব্যয় হচ্ছে আর একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাঠে মাটি ভরাট হচ্ছে না এটা খুবই কষ্টের কথা। ছোট ছোট বাচ্চারা কষ্ট করে ক্লাসে যাচ্ছে। পরীক্ষার সময় তাদের কষ্টের শেষ নেই। তিনি এ ব্যাপারে সরকারের আশু দৃষ্টি কামনা করেছেন।

এ বিষয়ে হরিণাকুন্ডু নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দা নাফিস সুলতানা জানান, বিষয়টি তাকে কেউ অবহিত করেননি। তবে দ্রুতই খোজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button