ক্যাম্পাসজানা-অজানাদেখা-অদেখাপাঠকের কথা

সবুজের চাদরে আবৃত প্রাঙ্গণে আমন্ত্রণ–সাজ্জাদ হোসেন

সাজ্জাদ হোসেন, ঝিনাইদহের চোখঃ
সূত্রঃ প্রতিদিনের কথা

১৭৭ একর ভূমির উপর বিস্তৃত দেশের সপ্তম সর্ববৃহৎ এবং স্বাধীনতার পর প্রথম প্রতিষ্ঠিত পাবলিক বিদ্যাপীঠ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়।

কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহ জেলার মাঝামাঝি অবস্থানে স্থাপিত এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে সবুজে ঘেরা অঙ্গনও বলা হয়।

সকালের সূর্য ঢলে পড়ার সাথে সাথে সতেজ হতে থাকে এই নীরব ভূমি। কখনো ডাবোল ডেকারে কখনোবা টাইটানিক খ্যাতনামা বাসে কিংবা মুড়ির টিনে সুবিশাল প্রান্তের বক্ষে ভিড় জমতে থাকে স্বপ্নচারীদের। তবে সকালে ক্যাম্পাসে সূর্যের আলোটা সবার জন্য হলেও এর স্বাদ নেয়ার ভঙ্গিমাটা একেক জনের কাছে একেক রকম।

কারোর সকাল হয় টিএসসিসি’র ক্যাফেটেরিয়া কিংবা বারান্দায় একুইসটিক গিটারের কড়া সুরে গানে গানে অথবা মিলন
ভাইয়ের টি স্টলে চায়ের চুমুকে কিংবা ‘আবৃত্তি আবৃত্তি’ সংগঠনের কোনো এক আবৃত্তিকারের কবিতার সুরের মোহনায়। আবার কেউ কেউ প্রিয়তমার হাত ধরে মফিজ লেকে অনুভূতির গল্প করে সকালের শুভ সূচনা করার চিত্রটা খুব সাধারণ।

‘মফিজ লেক’ জায়গাটি অবশ্য ইবির হাতিরঝিল নামেই বেশ সুপরিচিত। তবে এখানে শুধু কাপোলদের আনাগোনার মাঝেই যে সীমাবদ্ধ তাই নয় বরং শিক্ষার্থীদের ক্লাস প্রেজেন্টেশন বা ভাইভা শেষে ছবি তোলার জন্য বেশ প্রসিদ্ধ এই স্পটটি।

দুই জেলার মাঝামাঝি প্রতিষ্ঠিত বিদ্যাপীঠটি কুষ্টিয়া শহর থেকে প্রায় ২৪কিলোমিটার এবং ঝিনাইদহ শহর থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত যেখানে শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের জন্য রয়েছে প্রায় ৮০টি বাস। ছাত্র-ছাত্রীদের বসবাসের জন্য রয়েছে ৮টি আবাসিক হল।

বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে সবচাইতে বড় মসজিদ হিসেবে জায়গা দখল করে রয়েছে ইবি মসজিদ। মহান মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে স্থাপিত হয়েছে ‘মুক্ত বাংলা’ ভাস্কর্য এবং রয়েছে মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতি বিজড়িত ‘মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিব মুর‌্যাল’। ক্রিকেট, ফুটবল, হ্যান্ডবলসহ বিভিন্ন ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় জাতীয় ও আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে সংস্কৃতি চর্চায় বেশ সুনাম কুড়িয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

এছাড়াও বসন্ত বরণ ও বৈশাখকে গ্রহণ উপলক্ষে বাংলা ও ফোকলোর স্টাডিজ বিভাগের আয়োজনে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের
চর্চা ক্যাম্পাসটিকে আরো প্রাণবন্ত করে রেখেছে। বিশ্ববিদ্যালয় থিয়েটারের ভূমিকায় সিনেমা কিংবা নাটক প্রদর্শনীর মাধ্যমে প্রায়শই প্রফুল্লমণ্ডিত হয় ‘বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান মিলনায়তনটি’।

সামাজিক কাজ ও প্রগতিশীলতা অনুশীলনেও পিছিয়ে নেই ক্যাম্পাসটি। সামাজিক বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগে চলে নানান কল্যাণমূলক কর্মকাণ্ড। ‘তারুণ্য’র উদ্যোগে শীতার্থদের শীত বস্ত্র বিতরণ ; ‘কাম ফর রোড চাইল্ড’র উদ্যোগে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা প্রদান; ক্যাপ’র নারী সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন; ‘কনজুমার ইয়োথ’র ভেজাল খাদ্য বিরোধী অভিযান; ‘ইবি ডিবেটিং সোসাইটি’র প্রগতি চর্চাসহ ‘স্কাউট’; ‘বিএনসিসি’; ‘আবৃত্তি আবৃত্তি’; ‘রক্তিমা’ এর মত বহু সামাজিক সংগঠনের জুড়ি রয়েছে এই সবুজ ক্যাম্পাসে।

বাংলাদেশের সংবিধানের সাথে সামঞ্জস্য রেখে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে সকল ধর্মের ও বর্ণের দেশি ও বিদেশি ছাত্র-শিক্ষকের সমন্বয়ে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হয়। বিজ্ঞান, প্রকৌশল ও প্রযুক্তি, ব্যবসা প্রশাসন, সামাজিক বিজ্ঞান এবং মানবিক ও কলা অনুষদীয় বিষয়ের পাশাপাশি দেশে শুধুমাত্র এই বিশ্ববিদ্যালয়টিতেই ধর্মতত্ব ও ইসলামী আইনের উপর স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি প্রদান করা হয়।

৩৪ টি বিভাগে প্রায় ১৬০০০ হাজার শিক্ষার্থী দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসে পাড়ি জমিয়েছে স্বপ্নপূরণে। সুদীর্ঘ সময় বুকে লালন করা স্বপ্ন বিনির্মাণে বেছে নেয়া যেতে পারে প্রজ্বলিত ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণকে।

লেখক : শিক্ষার্থী, ফোকলোর স্টাডিজ বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button