জানা-অজানাটপ লিডদেখা-অদেখা

আধুনিকতার ভিড়ে হারিয়ে যাচ্ছে গরীবের বন্ধু হারিকেন

মোঃ হাবিব ওসমান, ঝিনাইদহের চোখঃ

হারিকেন হাতে নিয়ে ডাকপিয়ন ছুটে চলতো গ্রামের পর গ্রামে। বৃদ্ধরা রাতে বের হলেই হাতে থাকত এই হারিকেন।

যাকে তখনকার সময়ে রাত্রিকালীন বন্ধু হিসাবে অখ্যায়িত করেছিল অনেকেই। হারিকেনের আলো গৃহস্থালির পাশাপাশি ব্যবহার হতো রেলগাড়ি ও বিভিন্ন যানবাহনে। কিন্তু সভ্যতার আধুনিকায়ণে বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্স লাইটে বাজার ভরপুর ও জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে হারিয়ে যাচ্ছে এক সময়ের আলোর একমাত্র উৎস হারিকেন।

জানা গেছে, হারিকেন হচ্ছে জ্বালানি তেলের মাধ্যমে বদ্ধ কাচের পাত্রে আলো জ্বালাবার ব্যবস্থা। এর বাহিরের অংশে অর্ধবৃত্তাকার কাচের অংশ থাকে যাকে গ্রামীন জনপদে চিমনি বলে আর এর ভিতরে থাকে তেল শুষে অগ্নি সংযোগের মাধ্যমে আলো জ্বালাবার জন্য কাপড়ের সলতে। আর সম্পূর্ণ হারিকেন বহন করবার জন্য এর বহিরাংশে থাকে একটি লোহার ডান্টি। আলো কমানো বা বাড়ানোর জন্য নিম্ন বহিরাংশে থাকে একটি চাকতি। যা কমালে বাড়ালে শলতে ওঠা নামার সাথে আলো কমে ও বাড়ে। মোঘল আমলে হারিকেনের প্রচলন শুরু হয়। রাতের আঁধারে বিকল্প আলোর উৎস হিসাবে ধীরে ধীরে গ্রামাঞ্চলে এটি জনপ্রিয় হয়ে উঠে। কিন্তু কালের বিবর্তনে ও বাজারে আধুনিক ইলেকট্রনিক্স লাইটের সরবরাহ বাড়তে থাকায় ধীরে ধীরে কমতে থাকে হারিকেনের ব্যবহার। তবে এখনো গ্রামাঞ্চলের অধিকাংশ স্থানে রিক্সার নিচে হারিকেন বেধে চলাচল করতে দেখা যায়। একসময় রাস্তায় হারিকেন ছাড়া রিক্সা চালাচালে জরিমানা করত পুলিশ।

জানা যায়, তখনকার সময়ে হারিকেন মেরামতের জন্য কালীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজারে মিস্ত্রী বসতো। এদের স্থানীয় ভাষায় ডাকা হতো মেরামতি বলে। এছাড়া উপজেলার প্রতিটি বাজারে ছিল হারিকেন মেরামতির অস্থায়ী দোকান। এরা বিভিন্ন হাট বাজারে ঘুরে ঘুরে হারিকেন মেরামতের কাজ করতো। এছাড়া অনেকে গ্রামের বিভিন্ন বাড়িতে গিয়ে হারিকেন মেরামত করতো। এক সময় ছিল গ্রামের প্রতিটি ঘরে ঘরে হারিকেনের ব্যবহার। কিন্তু বর্তমানে আধুনিক ইলেকট্রনিক্স লাইটে বাজার ভরপুর হওয়ায় হারিকেনের প্রচলন বন্ধ হয়ে গেছে।

কালীগঞ্জ উপজেলার তৈলকূপী গামের আবুল কাশেম বলেন, হারিকেন এক সময়ে গ্রামাঞ্চলের আলোর একমাত্র উৎস হলেও বর্তমানে চায়না লাইট ব্যবহারের কারণে এখন কেউ হারিকেন ব্যবহার করে না। পূর্বের পেশাকে আকড়ে ধরে বাজারে বসলেও পাওয়া যায় না হারিকেন মেরামতের কাজ।

কালীগঞ্জ আড়পাড়া গ্রামের গৃহিণী শেফালী খাতুন জানান, এক সময় সন্ধ্যা হওয়ার আগেই কেরোসিন ভরে হারিকেনের কাঁচ মুছে রেডি করার কাজটা প্রতিনয়িত করতে হয়ত। আর রাতে ঘুমানোর আগে ডীম করে রাখাটাও এখন শুধু স্মৃতি। প্রতিরাতে পড়তে বসার আগেই হারিকেন নিয়ে টানা টানি করতে হত। আর রাতে স্যারের কাছে পড়তে যাওয়ার সময় সবাই একটা করে হারিকেন নিয়ে স্যারের বাসায় যেতে হত। রাতে রাস্তা দিয়ে হাটার সময় জোনাকী পোকার মত মিট মিট করে জ্বলত।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button