ক্যাম্পাসমাঠে-ময়দানে

কেসি কলেজ আন্তঃবিভাগ ফুটবল ফাইনালে রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও ডিগ্রী পাস

এলিস হক, ঝিনাইদহের চোখঃ

ঝিনাইদহ সরকারি কেসি কলেজের ব্যবস্থাপনায় আয়োজিত আন্তঃবিভাগ ফুটবল প্রতিযোগিতার একাদশ দিনের তৃতীয় রাউন্ডের প্রথম ও দ্বিতীয় সেমিফাইনাল খেলায় ডিগ্রী পাস ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান জয়লাভ করে ফাইনালের টিকিট কেটেছে।

আজ বুধবার ৩০শে অক্টোবর দুপুর সোয়া ২টায় ঝিনাইদহ সরকারি বালক স্কুল মাঠে অনুষ্ঠিত নক আউট পর্বের প্রথম সেমিফাইনালে ডিগ্রী পাস বিভাগ ২-০ গোলে দর্শন বিভাগকে এবং দ্বিতীয় সেমিফাইনালে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ ৩-১ গোলে বাংলা বিভাগকে হারিয়ে এই কৃতিত্ব দেখায়।

বিজয়ী দল ডিগ্রী পাস খেলার প্রথমার্ধে ২-০ গোলে এগিয়েছিল। ডিগ্রী পাসের পক্ষে ১২ নম্বর খেলোয়াড় নয়ন এবং ৮ নম্বর খেলোয়াড় ইমামুল গোল করেন। এদিনের খেলায় দর্শন দলের খেলোয়াড়দের কোনোভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেননি। পাশাপাশি ফরোয়ার্ড লাইনের খেলোয়াড়েরা তেমনভাবে আক্রমণ চালিয়েও সফল হতে পারেননি। ফলে কোনো রকমে তারা তাদের খেলা খেলেই দায়িত্ব খালাস!

মাঠে সারাক্ষণ দাপিয়ে বেড়িয়েছেন দর্শ দলের ডিফেন্ডার মামুন, মাঝমাঠের শাহরুখ শাহ, ফরোয়ার্ড অন্তর ও তারেক। ‍কিন্তু ডিগ্রী পাসের ডিফেন্ডারদের দৃঢ়তায় দর্শন বিভাগের প্রতিটি আক্রমণ রচনাকে নস্যাৎ করে দেন।

এবং ওদিকে অন্যতম শিরোপা প্রত্যাশী ডিগ্রী দলের অধিনায়ক মেহেদী, রাজন, পারভেজ, নয়ন ও রক্ষণভাগের জোন জুয়েল, আরাফাত ও জুবায়ের প্রমুখদের সমন্বয়ের প্রচেষ্টা তাদের খেলার ধারা-প্রধারায় চমৎকার খেলেছেন। তারা ভালো খেলেছেন বলেই দলটি জিতে ফাইনালে উঠেছে-এটাই দর্শন বিভাগের সমর্থকদের সবচেয়ে বড় স্বস্তিদায়ক খবর।

দলগত খেলায় তারা একে অন্যকে বল দেয়া-নেয়া করে এগিয়ে রাখার প্রত্যয় নিয়ে বিশেষ ভূমিকা পালন করেছেন। প্রথমার্ধে ২টি গোল করতে সমর্থ হলেও দ্বিতীয়ার্ধে তারা একাধিকবার গোল করার প্রয়াস চালিয়েও আর গোলবৃদ্ধি করতে ব্যর্থ হন।

শেষ পর্যন্ত ফাইনালের টিকিট ধরিয়ে দেন ঐ মেহেদী বাহিনীরা। ডিগ্রী পাসের প্রতিপক্ষ দল রাষ্ট্রবিজ্ঞান খেলবে ফাইনালে। স্থানীয় দর্শকদের যথেষ্ট আনন্দ দেন এই দর্শন দলের খেলোয়াড়দের নান্দনিক ফুটবল খেলায়। কাউকেই নিরাশ করেনি।

ডিগ্রী পাস বিভাগ : গোলকিপার নয়ন, আশরাফ ২ (হৃদয় ৬) (শুভ কুমার), জুবায়ের ৩, আরাফাত ৪, শামন ৫, মেহেদী ৭ (অধিনায়ক), ইমামুল ৮, পারভেজ ৯, জুয়েল ১১, নয়ন ১২ ও রাজন ১৫।

দর্শন বিভাগ : গোলকিপার তুহিন, মামুন ২, হাসান ৩, মোজাম ৪, তারেক ৫, শাওন ৬, শাহরুখ শাহ ৭, শাহীন ৯ (ইমরান ৮), অন্তর ১০, শামীম ১১ (অধিনায়ক) ও ইলিয়াস ১৩।

রেফারী : রবিউল ইসলাম। সহকারী রেফারী : জামাল হোসেন মোল্লা ও আজিজুর রহমান শেখ শামীম। ৪র্থ সহকারী রেফারী : শাহ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ।

দিনের অপর দ্বিতীয় সেমিফাইনালে খেলে রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও বাংলা বিভাগ। প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রতিদ্বন্দ্বিতায় গড়ে তোলেন উভয় দলের খেলোয়াড়েরা। গোলমিসের পাশাপাশি সুন্দর পাসের মহড়া দেখা গেছে এদিনের মাঠে। বিশেষ করে খেলার প্রথমার্ধে প্রথম ২৪ মিনিট পর্যন্ত কোনো দলই গোলের মুখ দেখেনি। বিরতির আগ পূর্বমুহূর্তে নাটকীয়ভাবে প্রথম গোলে সন্ধান পেয়ে যায় রাষ্ট্রবিজ্ঞান দল। গোল করে বসেন রাষ্ট্রবিজ্ঞান দলের ৬ নম্বর খেলোয়াড় মাফিজুর।

তিনি দর্শনীয়ভাবে রিটার্ন বলকে লাথি মেরে বাংলা দলের গোলকিপার আসাদুজ্জামানকে পরাস্ত করে জালে বল প্রবেশ করান (১-০)। এরপরেই বিরতির বাঁশি।

বিরতির পর নতুন উদ্যম নিয়ে খেলতে নামে বাংলা বিভাগের খেলোয়াড়েরা। কেউই ঠাহর করতে পারেননি খেলার ফলাফল পাল্টে যেতে পারে! কিভাবে কিভাবে গোল হয়…সেটা আগে থেকে কোনোকিছুই বলা যায় না। দ্বিতীয়ার্ধে বাংলা বিভাগ দল খেলায় ফিরে আসে।

৪৮ মিনিটে বাংলা দল একটি ফ্রিকিক লাভ করে। ডি বক্সের সামান্য বাইরে থেকে বল বসানো হয়। সেখানে বাংলা দলের ফরোয়ার্ড আলামিন বিশ্বাস নাটকীয়ভাবে লম্বা রংধনুর মতো কিক মারেন। ওদিকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান দলের গোলকিপার আলী হামজা বলকে নাগাল পেলেও পাঞ্চ করেন। কিন্তু তার হাতকে ফাঁকি দিয়ে জালে জড়িয়ে যায়। ফলে বাংলা দল উল্লাসে মেতে উঠে। সাথে সমর্থকরা আনন্দে মেতে উঠেন (১-১)। চরম উত্তেজনা!

কোন্ দল ফাইনালে উঠবে-এই নিয়ে দুই দলের মধ্যে দারুণ দারুণ খেলার পারদ চরমে উথলে উঠে। একবার বাংলার পকেটে পেন্ডুলাম দোলে…আরেকবার রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পকেটে পেন্ডুলাম দোলে…! কোনোকিছুই কূল কিনারা খুঁজে পাচ্ছিলেন না স্থানীয় দুই দলের সমর্থকরা। সাথে কলেজের সম্মাণিত শিক্ষক-শিক্ষিকাবৃন্দরাও…কেউই বাদ যাননি।

এমনকি মাঠে দায়িত্বরত রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির ৫ জন সদস্যরাও বাদ যাননি। তারাও অর্থাৎ রেডক্রিসেন্টের মেহেদী হাসান, মেহেদী হাসান উৎস, মেহেদী হাসান বাঁধন, মেহেদী হাসান, মাজহারুল ও সুরাইয়ারা খেলা দেখছিলেন..এই ৫ জনের ৪ জনের নাম মেহেদী গং। মেহেদী রাঙিয়ে দেয়ার আরেক নাম খেলা। তো অপর দুইজনের নাম ভিন্ন।

কে যেনো কৌতুক করে বলে উঠেন-আপনারা মেহেদী পরিবারের রাষ্ট্র….কাজেই..!! তো তক্ষুণি দুইজনের ভিন্নতার একজন বলে উঠেন-কেন? আমি আছি না? আমার নাম সুরাইয়া। বিনীতভাবে তাকে তীর্যকভাবে বলা হলো-না হলে আপনি মেহেদী সুরাইয়া….সঙ্গে সঙ্গে খুনশুটি হেসে উঠেন অন্য ৪ জনেরা। তারাও কিন্তু ঐ দ্বিতীয় সেমিফাইনালের দুই দলের খেলোয়াড়ের মহড়া দেখেন। তাদেরও টেনশন কাটে না আর কী!

যাইহোক-খেলার ধারায় ফিরে আসি। খেলতে খেলতে ১ মিনিটের ব্যবধানে অবিশ্বাস্য কায়দায় ২টি গোল পেয়ে যায় রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ। যেনো মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি! দ্বিতীয়ার্ধের ৪৯ মিনিটে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ৯ নম্বর খেলোয়াড় মুকুল বক্সের মধ্যে জটলার সৃষ্টি হলে গোল দিয়ে বসেন (২-১)।

১ মিনিট পর আরেকটি গোল হয়ে যায় রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পকেটে। ৫০ মিনিটে ৭ নম্বর খেলোয়াড় আকিব বলকে সজোরে কিক করে জালে পাঠান (৩-১)। পরের চিত্র পাল্টে যায় মধুসূদন বাহিনীদের অব্যাহত আক্রমণ রচনার প্রচেষ্টা। সারাক্ষণ মাঠ চষে বেড়ান ঐ ১০ নম্বর খেলোয়াড় অধিনায়ক হালকা পাতলা গড়নের অধিকারী মধুসূদন। সাথে যোগ দেন শাকিল-মুকুল-মাফিজুর ত্রয়ীরা। ঐ পর্যন্তই খেলার ধারা অব্যাহত রাখে রাষ্ট্রবিজ্ঞান দলীয়রা।

দ্বিতীয়ার্ধের শেষদিকে একবার পেনাল্টি পেয়েও যায়। রাষ্ট্রবিজ্ঞান দলের জনৈক ডিফেন্ডারের হ্যান্ডবল হওয়ায় রেফারি জামাল পেনাল্টি কিকের নির্দেশ দেন। পেনাল্টি কিক বাংলা দলের বদলী খেলোয়াড় ৭ নম্বর জার্সিধারী আবু সুমন বিশ্বাস। তার কিক সোজা গোলকিপার আলী হামজার বুকে বল তুলে দেন। আর গোল করতে পারলেন আবু সুমন। ফলে হতাশ হয়ে যান বাংলা দলের সমর্থকরা।

বিমর্ষ বদনে বাংলা দলের সকল খেলোয়াড়েরা মাঠে শুয়ে পড়েন। কী আর করা যাবে? ফুটবল গোলের খেলা…সেটাই আজ আবারো প্রমাণিত হলো। ফাইনালের শেষ টিকিটটি পেয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগীয় উল্লাসে মেতে উঠেন।

৩-১ গোলে হেরে গেলো বাংলা বিভাগীয়রা। ফাইনালে খেলবে সেই রাষ্ট্রবিজ্ঞান আর এই ডিগ্রী পাস। দ্বিতীয় সেমিফাইনাল খেলা শেষে মাঠ ফাঁকা হয়ে যায়…এরই মধ্যে মাঠে অবস্থানরত গরু-বাছুরগুলো ঘাস খেয়ে জাবর কাটে আর কী!

রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ : গোলকিপার আলী হামজা, আশিক শেখ ২, জসীমউদ্দিন ১৪, রাব্বি ৩, সজীব কুমার বিশ্বাস ৫, মাফিজুর ৬, আকিব হোসেন ৭, শাকিল হোসেন ৮, মুকুল হোসেন ৯, মধুসূদন ১০ (অধিনায়ক) ও রাসেল মিয়া ১১ (মুশফিকুর ১৩) (হযরত আলী ১২)।

বাংলা বিভাগ : গোলকিপার আসাদুজ্জামান (অধিনায়ক), আরাফাত ৩, মোঃ রুহুল আমিন ৫, বিল্লাল ৬, আলামিন বিশ্বাস ৯, জাহাঙ্গীর ১০, রিয়াজ ১১, মিজান ১২, পিকুল হোসেন ১৩, রুহুল (ইমরান ৬) ও রবিউল ১৫ (আবু সুমন বিশ্বাস ৭)।

রেফারী : জামাল হোসেন মোল্লা। সহকারী রেফারী : রবিউল ইসলাম ও আজিজুর রহমান শেখ শামীম । ৪র্থ সহকারী রেফারী : শাহ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ।

মাঠে ফুটবল খেলার উপর চলতি খেলার ধারা বিবরণী দেন এলিস হক।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button