টপ লিডশৈলকুপা

কৃষক জামালকে বাঁচাতে ৩৩ টি সেলাই দিয়েছেন চিকিৎসকরা

ঝিনাইদহের চোখঃ

বাজারে গোলামাল হয়েছে, বিষয়টির কিছুই জানেন না নিরিহ কৃষক জামাল হোসেন (৫০)।

https://www.youtube.com/watch?v=5oKX_V40QIs

পাশের ইউনিয়নের এক ফুটবল মাঠে গিয়েছিলেন খেলা দেখতে। খেলা শেষে ভ্যানযোগে ফিরে বাজারে নামার সঙ্গে সঙ্গে পেছন থেকে ধারালো অস্ত্রের আঘাত। একটানে গোটা পিঠ চিরে দেওয়া হয়েছে। পিঠের মাংশ আলগা হয়ে পড়লে সন্ত্রাসীরা ফেলে রেখে চলে যায়। চিকিৎসকরা তার এই পিঠের মাংশ জোড়া দিতে ৩৩ টি সেলাই দিয়েছেন। হাসপাতালের বিছানায় কাঁতর এই কৃষক শুধু বলছেন আমার অপরাধ কি ?

কৃষক জামাল হোসেনের উপর এই অমানবিক নির্যাতনটি হয়েছে সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টায় ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার হাট-ফাজিলপুর বাজারে। ওই বাজারের পাশে পাচপাকিয়া গ্রামে তার বাড়ি। জামাল হোসেনের উপর হামলার পূর্বে রাস্তায় চলাচল নিয়ে বগুড়া ইউনিয়নের লোকজনের সঙ্গে আবাইপুর ইউনিয়নের লোকজনের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া হয়। এরপর জামাল হোসেন ওই বাজারের পাশেই তার বাড়ির রাস্তায় ভ্যান থেকে নামার সঙ্গে সঙ্গে আবাইপুর ইউনিয়নের লোক দেখে তার উপর এই হামলা হয়। ধারালো অস্ত্র দিয়ে তার ঘাড়ের কাছ থেকে মাঝার মেরুদন্ড পর্যন্ত চিরে দিয়েছে সন্ত্রাসীরা। বর্তমানে তিনি ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের সাজারি বিভাবে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তার রাত-দিন কাটছে হাসপাতালের বিছানায় বসেই। শরীরে এতোটা আঘাত যে বিছানায় শোবার ক্ষমতা নেই।

কৃষক জামাল হোসেন আবাইপুর ইউনিয়নের পাঁচপাকিয়া গ্রামের মৃত জালাল উদ্দিন মোল্লার পুত্র। অত্যান্ত দরিদ্র এই মানুষটি অন্যের জমিতে কৃষি কাজ করে সংসার চালান। তিন সন্তান আর স্ত্রীকে নিয়ে ৫ জনের সংসার।

স্ত্রী শরিফা বেগম জানান, তারা খুবই দরিদ্রতার মধ্যে বসবাস করেন। স্বামী একদিন কৃষি কাজ না করলে তাদের সংসার চলে না। বড় ছেলে রাব্বি মোল্লা (১৭) কলেজে পড়ছে, ছোট ছেলে আলামিন (১৫) বাবার সঙ্গে কাজ করে। ছোট মেয়ে তমা (৭) দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়ে। আর বড় মেয়ে তানিয়া খাতুনের বিয়ে দিয়েছেন। ৫ জনের সংসার চালাতে স্বামী জামাল হোসেন দিনরাত পরিশ্রম করেন। নিজেদের মাঠে কোনো চাষযোগ্য জমি নেই। ৭ কাঠা জমির উপর ভিটাবাড়ি। টিনের ছাপড়ার একটি ঘরের মাঝ দিয়ে বেড়া দিয়ে স্বামী-সন্তান নিয়ে বসবাস করেন।

তিনি জানান, তার স্বামী কোনো রাজনীতি করেন না। সারাদিন পরিশ্রমের পর বিকালে বাজারে যান। শুক্রবার বিকালে তিনি গিয়েছিলেন তাদের ইউনিয়নের পাশের ইউনিয়ন হরিশংকরপুরে ফুটবল খেলা দেখতে যান। ওই এলাকায় ফুটবল টুর্নামেন্ট চলছে। সেখান থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টার দিকে ভ্যানযোগে ফাদিলপুর বাজারের পাশেই তাদের গ্রামের রাস্তার সম্মুখে এসে নামেন। নামার সঙ্গে সঙ্গে একজন ছুটে এসে বাড়ি কোথায় জানতে চান। নিজ গ্রামের নাম বলার সঙ্গে সঙ্গে ওই ব্যক্তির সঙ্গে থাকা অন্য সন্ত্রাসীরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে তার পিঠে আঘাত করে। জামাল হোসেন হামাগুড়ি দিয়ে বাঁচার চেষ্টা করলে তারা পিঠে পোচ দিয়ে চিরে দেয়। এক টানে শরীরের ঘাড় থেকে মাঝের মেরুদন্ড পর্যন্ত মাংশ ফাঁকা হয়ে যায়। এরপর ফেলে রেখে চলে যায় সন্ত্রাসীরা। স্থানিয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে প্রথমে শৈলকুপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। তার অবস্থা খারাপ ভেবে রাতেই ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। হাসপাতালের চিকিৎসকরা তার পিঠে ৩৩ টি সেলাই দিয়ে চিরে যাওয়া স্থানটি বন্ধ করেছেন। বর্তমানে সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন কৃষক জামাল হোসেন।

এ ব্যাপারে পুলিশের পক্ষ থেকে তাদের কাছ থেকে একটি লিখিত নেওয়া হয়েছে বলে জানান।

কৃষক জামাল হোসেনের বোন আরিফা খাতুন জানান, তার ভাই কোনো ঝামেলায় থাকেন না। তার বিরুদ্ধে একটি মানুষও কোনো অভিযোগ দিতে পারবে না। তারপরও কেন তাকে এভাবে মারা হলো প্রশ্ন আরিফার। তিনি এই ঘটনার উপযুক্ত বিচার দাবি করেছেন।

জামাল হোসেনের শ্যালক মনিরুল ইসলাম জানান, গোটা পাঁচপাকিয়া গ্রামের কেউ তাকে খারাপ বলবে না। তারপরও মিথ্যা সন্দেহে এই নির্মম নির্যাতন কোনো ভাবেই মানা যায় না।

এ বিষয়ে হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের প্রধান ডাক্তার জাহিদুর রহমান জানান, তার পিঠের আঘাত খুবই গুরুত্বর। বেশ কিছুদিন তাকে বিছানায় থাকতে হবে। অনেকটা কাটার কারনে কষ্ট পেতে হবে তাকে। তবে তিনি আশংকামুক্ত।

আবাইপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হেলাল উদ্দিন বিশ^াস জানান, জামাল হোসেন খুবই নিরিহ একটা মানুষ। কৃষি কাজ করে তার সংসার চলে। শুক্রবার গিয়েছিলেন ফুটবল খেলা দেখতে। তিনি বলেন, ওই মাঠে খেলা দেখে ফেরার পথে ইজিবাইকে ধাক্কা লাগা নিয়ে ফাদিলপুর বাজারে দুইপক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া হয়। এসময় অন্যরা চলে গেলেও নিরিহ কৃষক জামাল হোসেন তাদের সামনে পড়ে যায়। তিনি বলেন, সামান্য বিষয় নিয়ে গোলমাল এক এলাকার মানুষ হলেই সবাইকে মারতে হবে এটা কোনা ভাবেই ঠিক হয়। তিনি আরো বলেন, রবিবার বিষয়টি নিয়ে থানায় শালিস বসার কথা রয়েছে, উপযুক্ত বিচার না হলে আইনের আশ্রয়ে যাবেন।

বিষয়টি নিয়ে শৈলকুপা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বজলুর রহমানের সঙ্গে কথা বলার জন্য মুটোফোনে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি ধরেননি।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button