ধর্ম ও জীবন

মনে খটকা লাগলে কী করবেন?

শয়তান মানুষের প্রকাশ্য শত্রু। মানবজাতীকে বিপথগামী করার জন্য আল্লাহর কাছ থেকে ক্ষমতা চেয়ে নিয়েছে শয়তান। এ শয়তানেরই একটি কাজ হলো মানুষের মনে খটকা লাগানো। এ কাজটি করতে শয়তান মুমিন মুসলমানের পেছনে সব সময় লেগে থাকে।

অনেক সময় বিভিন্ন বিষয়ে মনে খটকা সৃষ্টি হয়। যদি কখনো মনে খটকা লাগে তখন কী করবেন? যতক্ষণ মানুষের মনের খটকা দূর না হয় ততক্ষণ ইবাদত-বন্দেগিসহ কোনো কাজেই শান্তি কিংবা স্বস্থি পায় না মুমিন।

শয়তান মানুষের মনে যত কঠিন খটকাই লাগানোর পায়তারা করুক না কেন, মানুষ যদি ঈমানের ওপর অটল ও অবিচল থাকে তবে শয়তানের খটকা লাগানো কোনোভাবেই সফল হবে না। হাদিসে এসেছে-

হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বর্ণনা করেছেন, আমার উম্মতের অন্তরের মধ্যে যে খটকা সৃষ্টি হয়, আল্লাহ তাআলা তা ক্ষমা করে দেন; যে পর্যন্ত না তারা তা কাজে পরিণত না করে অথবা মুখে প্রকাশ করে।’ (বুখারি ও মুসলিম)

আল্লাহ তাআলা যখন আয়াত নাজিল করলেন, ‘তোমরা তোমাদের মনের কথা প্রকাশ কর কিংবা না-ই কর, আল্লাহ অবশ্যই তোমাদের কাছ থেকে সে ব্যাপারে হিসাব গ্রহণ করবেন।’ তখন মুমিন মুসলমান ভীত হয়ে পড়েন যে, তাদের মনের সেসব কুধারণার জন্যও পাকড়াও হবেন, যা তারা প্রকাশ কিংবা কাজে বাস্তবায়ন করেননি।

অতঃপর আল্লাহ তাআলা পরবর্তী আয়াত নাজিল করে তাদেরকে অন্তরের কুধারণার বাস্তবায়ন ছাড়া তাতে পাকড়াও করবেন না বলে উপরোল্লেখিত আয়াতের বিধানকে রহিত করেন।

সাহাবাগণ প্রিয়নবিকে জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমাদের অন্তরে এমন কিছু ধারণা বা কুমন্ত্রণা তৈরি হয়, যা মুখে প্রকাশ করাই আমাদের কাছে গুরুত্বর অপরাধ মনে হয়। এতে আমাদের অবস্থা কিরূপ হবে?

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘এটাই হলো প্রকাশ্য ঈমানের আলামাত বা লক্ষণ। কেননা ঈমান আছে বিধায় তো মনের মধ্যে খটকা সৃষ্টি হওয়া সত্ত্বেও আল্লাহর ভয় তোমাদেরকে প্রকম্পিত করে তোলে। আর যদি ঈমান না-ই থাকতো তবে তোমাদের মনে যে চিন্তা-সংকল্প, সেই কাজ নিদ্বির্ধায় করতে কাউকে পরোয়া করতে না।

মনে খটকা লাগার বিষয়টি স্পষ্ট করতে এবং সন্দিহান হওয়ার পর করণীয় সম্পর্কে হাদিসে পাকে প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সুস্পষ্ট ভাবে ঘোষণা করেন-

হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, একদিন কয়েকজন সাহাবা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘শয়তান তোমাদের কারো কাছে আগমন করে, অতঃপর প্রশ্ন করতে (খটকা লাগাতে) থাকে যে, এটা সৃষ্টি করেছে কে? ওটা সৃষ্টি করেছে কে? এমনকি এটাও প্রশ্ন করে (এ খটকাও লাগায়) যে, তোমাদের প্রভুকে সৃষ্টি করেছে কে?

শয়তান যখন এ পর্যন্ত পৌঁছায় তখন সে ব্যক্তির কর্তব্য হলো- আল্লাহর কাছে (শয়তানের এ রূপ প্রশ্ন বা খটকা লাগানো) থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করা এবং (তার সঙ্গে বিতর্কে লিপ্ত হওয়া থেকে ) বিরত থাকা।’ (বুখারি ও মুসলিম, মিশকাত)

এ কথা ভুলে গেলে চলবে না যে,
ঈমানদারের মনে সন্দেহ বা খটকা লাগানোর কাজে দুই ধরনের শয়তান নিয়োজিত রয়েছে। তারা হলো জিন শয়তান আর অপর শ্রেণী হলো মানুষ শয়তান। যাদের ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা কুরআনে পাকে ঘোষণা করেছেন-

‘যারা মানুষের অন্তরে খটকা বা সন্দেহ সৃষ্টি করে। মানুষ এবং জিন শয়তান থেকে)।’ (সুরা নাস)

মনে রাখতে হবে
জিন শযতান সবসময়ই মানুষের অন্তরে কুমন্ত্রণা দিয়ে বিপথগামী করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালায়। এ শয়তানের সঙ্গে বিতর্কে জড়িয়ে পড়লে পরাজয় হওয়ার সম্ভাবনাই প্রবল। তাই কোনো অবস্থাতেই জিন এবং মানুষরূপী শয়তানদের সঙ্গে সন্দেহ ও খটকা সম্পর্কিত বিষয়ে তর্ক নয়।

খটকা ও সন্দেহ থেকে আল্লাহর কাছে তারই শেখানো ভাষায় আশ্রয় চাওয়াই ঈমানদার মুমিনের শ্রেষ্ঠ কাজ। যেভাবে আল্লাহ তাআলা মানুষকে শিখিয়েছেন-

رَبَّنَا لَا تُزِغْ قُلُوبَنَا بَعْدَ إِذْ هَدَيْتَنَا وَهَبْ لَنَا مِن لَّدُنكَ رَحْمَةً ۚ إِنَّكَ أَنتَ الْوَهَّابُ

উচ্চারণ : ‘রাব্বানা লা তুজেগ কুলুবানা বাদা ইজ হাদাইতানা ওয়াহাবলানা মিল্লাদুংকা রাহমাহ, ইন্নাকা আংতাল ওয়াহ্হাব।’
অর্থ : হে আমাদের প্রভু! হেদায়েত লাভের পর আমাদের অন্তরকে বক্র করবেন না। আপনার পক্ষ থেকে আমাদেরকে রহমত দান করুন। নিশ্চয় আপনি শ্রেষ্ঠ দানকারী।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ৮)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে মনে খটকা তৈরি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহর কাছে তাওবা করে ফিরে আসার সঙ্গে তারই কাছে সর্বাবস্থায় আশ্রয় প্রার্থনা করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button