সাক্ষাৎকার

দারিদ্র্য-ক্ষুধামুক্ত দেশ গড়াই আমার একমাত্র লক্ষ্য: প্রধানমন্ত্রী

#ঝিনাইদহের চোখঃ

দেশের জনগণকে উন্নত জীবন দেওয়ার পাশাপাশি দারিদ্র্য ও ক্ষুধামুক্ত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলাই হচ্ছে তাঁর একমাত্র লক্ষ্য বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

চীনের রাষ্ট্রীয় ইংরেজি ভাষার চ্যানেল সিটিজিএনকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। চীন সফরকালে দেয়া এ সাক্ষাৎকারটি শুক্রবার (৫ জুলাই) সিটিজিএন তাদের ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশ করে।

সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একমাত্র আমার বোন ছাড়া আমি পরিবারের সবাইকে হারিয়েছি। কিন্তু জনগণ এখন আমার প্রকৃত পরিবার। তারা আমার খুব ঘনিষ্ঠ। তাই আমি মনে করি আমার একমাত্র কাজ হচ্ছে আমার জনগণকে উন্নত জীবন প্রদান করা। দারিদ্র্য ও ক্ষুধামুক্ত সমৃদ্ধ জীবন প্রদান করা।

শেখ হাসিনা বলেন, আমার লক্ষ্য হচ্ছে আমার পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা বাস্তবায়নে বাংলাদেশকে একটি টেকসই দেশ হিসেবে গড়ে তোলা। ১-৬ জুলাই চীনে দ্বিপক্ষীয় সফরকালে প্রধানমন্ত্রী সিজিটিএনকে (চাইনিজ গ্লোবাল টেলিভিশন নেটওয়ার্ক) এ সাক্ষাৎকার দেন।

রিপোর্টার যখন প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, আপনি তো বাংলাদেশে খুবই জনপ্রিয় এবং আপনি একজন ক্ষমতাধর নারী।’ প্রধানমন্ত্রীর বিনয়ী জবাব, ‘আমি অনুভব করি আমাকে জনগণের সেবা করতে হবে। অবশ্যই তারা আমাকে ভালোবাসে।

তিনি বলেন, আমার বাবা কি করতে চেয়েছিলেন, তা যখনই ভাবি তখনই আমি তাঁর ডায়রী পড়ি। এটি আমার অনুপ্রেরণা। আমার বাবা সব সময় জনগণের কথা ভাবতেন। কারণ তারা ছিল খুবই গরীব। দেশের ৯০ ভাগ মানুষ দারিদ্র্যতার মধ্যে বসবাস করতো। আমার বাবা এ সব মানুষের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করেছিলেন।

তিনি আরও বলেন, আমার বাবা জানতেন কিভাবে জনগণ ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। আমাদের শৈশব থেকেই তিনি সব সময় আমাদের বলতেন, জনগণ ভোগান্তির শিকার হচ্ছে এবং তিনি তাদেরকে উন্নত জীবন প্রদান করতে চান। আমরা তাঁর কাছ থেকে দেশ ও জনগণকে ভালোবাসতে এবং দায়িত্বশীলতা শিখেছি।

শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু তাঁকে জনগণের জন্য কাজ করতে এবং তাদের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করতে বলতেন। আপনি যখন কিছু করেন এবং জনগণ এতে সন্তুষ্ট হয় তখন সেটি আসলে গুরুত্বপূর্ণ। চীন সেটা দেখিয়েছে। আমি এখানে এসে খুবই আনন্দিত। চীনের জনগণকে আমি অভিনন্দন জানাই।

সদ্য সমাপ্ত ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) বার্ষিক বৈঠক সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি মনে করি বর্তমান সময় এ কর্মসূচি ফলপ্রসূ হয়েছে। আমাদের ব্যবসায়ী সম্প্রদায় আমার সঙ্গে এখানে এসেছে। আমি জানতে পেরেছি তারা বেশ কিছু নতুন ধারণা পেয়েছে।’ এখন পৃথিবীটা গ্লোবাল ভিলেজ তথা পরস্পরের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে যুক্ত একটি গ্রামে পরিণত হয়েছে। এখানে কেউ একা চলতে পারে না। আমাদের জনগণের আশা-আকাঙ্খা পূরণ আর জীবনমান উন্নয়ন করতে আমি সব সময় আঞ্চলিক সংযোগকে গুরুত্ব দিয়ে থাকি।

সাক্ষাৎকারের গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলো নিম্নরূপ :

লিউ ইয়াং : পুনঃনির্বাচিত হওয়ার পর এটি আপনার প্রথম চীন সফর। এ সফর থেকে আপনি কি প্রত্যাশা করেন?

প্রধানমন্ত্রী : আপনি জানেন চীনের সঙ্গে আমাদের চমৎকার সম্পর্ক রয়েছে। সেজন্যই আমি চীন সফরের চিন্তা-ভাবনা করি। ১৯৯৬ সালে আমার প্রথম মেয়াদেই আমি চীন সফর করি। এটি ছিল চীনে আমার প্রথম সরকারি সফর। আমার বাবা ১৯৫২ ও ১৯৫৭ সালে চীন সফর করেন। এখন আমি এখানে এবং খুবই আনন্দিত। চীন আমাদের বন্ধু দেশ। আমাকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য চীনের প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

লিউ ইয়াং : আমরা জানি বাংলাদেশে অবকাঠামো খাতে চীন ব্যাপক বিনিয়োগ করেছে। অবকাঠামোর পাশাপাশি চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে অন্যান্য খাতে বিশেষ করে বেল্ট ও রোড ফ্রেমওয়ার্কের অধীনে কি সহযোগিতা হতে পারে?

প্রধানমন্ত্রী : আমি মনে করি যোগাযোগ ব্যবস্থা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের সকল প্রতিবেশী দেশের মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থা দরকার। চীন সত্যিই আমাদের সঙ্গে সহযোগিতা করছে। চীনের অনেক কোম্পানি আমাদের বহু গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে নির্মাণ কাজ চালাচ্ছে। আপনি জানেন আমরা বাংলাদেশ-চীন-ভারত-মিয়ানমারকে নিয়ে অর্থনৈতিক করিডোরে চুক্তি স্বাক্ষর করেছি। এ করিডোর আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য ও যোগাযোগের দরজা উন্মুক্ত করে দেবে। পাশাপাশি ট্রান্স এশিয়ান হাইওয়ে ও রেল যোগাযোগের উন্নয়নেও সহায়ক হবে।

লিউ ইয়াং : আপনি চীনের গত ৭০ বছরের উন্নয়নের মূল্যায়ন কিভাবে করেন? এশিয়া ও বাকি বিশ্বে চীনের সফলতা সম্পর্কে আপনি কি মনে করেন?

প্রধানমন্ত্রী : আমাদের একটি প্রতিবেশী দেশ উন্নত হলে অন্যান্য প্রতিবেশীরাও এর ফলাফল পায়। আমার প্রতিবেশী অনেক উন্নত হলে আমরা তাদের কাছ থেকে শিক্ষা নিতে পারি। পাশাপাশি এক সঙ্গে কাজও করতে পারি। সত্যি বলতে কি চীন ৭০ বছর আগে পুনর্জন্ম লাভ করে। সে সময় কি পরিস্থিতি ছিল আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না। কিন্তু এ স্বল্প সময়ের মধ্যে চীন ব্যাপক উন্নয়ন করেছে। বর্তমানে চীন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি। সুতরাং আপনি এ ব্যাপারে গর্ব করতে পারেন।

আরেক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার বাবা জনগণের স্বার্থে নিজেকে উৎসর্গ করেন। আমরা তাঁর কাছ থেকে দেশ ও জনগণকে ভালোবাসতে এবং দায়িত্বশীলতা শিখেছি।’ ২০০৯-২০১৯ এই ১০ বছরে বাংলাদেশকে আমরা পরিবর্তন করেছি। চীনই আমাদেরকে উন্নয়নের এই পথ দেখিয়েছে। তাই আমি এ অর্জনের জন্য আবারো অভিনন্দন জানাচ্ছি।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button