দেখা-অদেখা

অচিরেই বিলীন হয়ে যাবে ঐতিহ্যের ঝাউবিথী!

#ঝিনাইদহের চোখঃ

বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের নগরী কক্সবাজার। এ নগরীর সৌন্দর্য্য বর্ধনকারী সবুজ বেষ্টনী ঝাউবাগান এখন হুমকির মুখে পড়েছে। টানা কয়েক দিনের ভারী বর্ষণের কারণে সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যাওয়া ও ঢেউয়ের ধাক্কায় ভাঙছে বালিয়াড়ি। আর সমুদ্রগর্ভে হারিয়ে যাচ্ছে ঝাউবাগান।

জানা যায়, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে ১৯৭২-৭৩ সালে কক্সবাজার সুমুদ্র সৈকতের বালিয়াড়িতে ঝাউবাগান গড়ে তোলা হয়। এসময় বালিয়াড়ির প্রায় ৫শ’হেক্টর জায়গায় লাগানো হয় সাড়ে ১২ লাখেরও বেশি ঝাউগাছ। পরে বাগানের আয়তন আরো বাড়ে। এই সবুজ বেষ্টনী, বিশে^র দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের সৌন্দর্য্য বাড়ানোর পাশাপাশি একে প্রাকৃতিক দুর্যোগে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির হাত থেকেও রক্ষা করে।

তবে, জলবায়ুর বিরূপ প্রভাবের কারণে সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় এবং ঢেউয়ের ধাক্কায়, গেল কয়েক বছর ধরেই বর্ষা মৌসুমে সৈকতের বালিয়াড়িতে ভাঙ্গন তীব্র আকার ধারণ করছে। ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে ঝাউ বাগানের। গত কয়েক বছরে প্রায় ২শ’ হেক্টর বাগানের পাঁচ লাখেরও বেশি ঝাউ গাছ সমুদ্রগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বিভিন্ন সময়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগেও ঝাউ বাগানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

কক্সবাজারের সাবেক বনকর্মী আবু শামা জানান, প্রতি বছরই বর্ষার এমন সময়ে সাগরের জোয়ারের পানি ফুঁসে উঠে। পর্যটন সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, যদি এভাবে ঝাউবিথী বিলীন হতে থাকে তাহলে এক সময় বড় ধরণের বিপর্যয়ে পড়বে কক্সবাজার শহর। তাই দ্রুত একটি বাঁধ নির্মাণের দাবি তুলেছেন তারা।

শহরের বাহারছড়ার সেলিম উদ্দিন বলেন, সৈকতের ঝাউবাগান প্রতি বছরের জোয়ারের তোড়ে ভেসে যায়। চলতি বর্ষায় জোয়ারের পানি আরো বৃদ্ধি পাওয়ার আশংকা রয়েছে। জোয়ারের পানিতেই সবচেয়ে বেশী ক্ষতি হচ্ছে ঝাউবাগান।

পথশিশুদের কল্যান মূলক সংগঠন “নতুন জীবন” এর সদস্য জান্নাতুল ফেরদৌস লিপি বলেন, “ তিন দিনের টানা বৃষ্টিতে সমুদ্র উত্তাল হওয়ায় অনেক ঝাউগাছ সাগরে বিলিন হয়ে গেছে। সৈকতের বালিকা মাদ্রাসা পয়েন্টে হাজারো ঝাউগাছ পড়ে থাকতে দেখা গেছে। সাগরের ঢেউয়ে পড়ে যাওয়া ঝাউগাছ বনবিভাগের কর্মকর্তারা কেটে নিয়ে যাচ্ছে। আজকে সমুদ্র এমন উত্তাল ছিলো যে, ঢেউতে ঝাউগাছগুলো বার বার আছড়ে ফেলছে এবং ঝাউবাগানের ভেতরে ডুকে পড়ছে। আমার সামনেই অনেক ঝাউগাছ ঢেউয়ের আছড়ে মাটিতে পড়ে গেছে।”

মোহাম্মদ নাসির জানান, সৈকতে সামুদ্রিক জোয়ারের পানির তোড়ে যে হারে ঝাউগাছ বিলীন হচ্ছে সেই হারে নতুন বনায়ন হচ্ছে না। তাই কক্সবাজার শহরটি রক্ষার জন্য এবং পর্যটন শহরের সৌন্দর্য রক্ষার স্বার্থে সৈকতে নতুন করে ঝাউবাগান বনায়নের দাবি জানচ্ছি।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন, সৌন্দর্য্য বর্ধনকারী সবুজ এই বেষ্টনী রক্ষায় বাঁধ নির্মাণের কাজ খুব শীঘ্রই শুরু হবে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী তনয় কুমার ত্রিপুরা বলেন, সরকারের উচ্চ পর্যায়ে কক্সবাজারের ঝাউবিথী রক্ষায় আলোচনা হয়েছে। খুব শীঘ্রই ঝাউবিথী রক্ষায় একটি বাঁধ নির্মাণেরও পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। যা শীঘ্রই বাস্তবায়ন করবে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, বঙ্গবন্ধুর রোপনকৃত ঝাউবন রক্ষায় কাজ চলছে। আমরা আলোচনা করছি, কিভাবে তা রক্ষা করা যায়। যেহেতু এটা কক্সবাজারের ঐতিহ্যে তা রক্ষা করা অবশ্যই প্রয়োজন।

প্রসঙ্গত, ঝাউবাগান ক্রমশ: বিলীন হয়ে যাওয়ায়, একদিকে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত যেমন সৌন্দর্য্য হারাচ্ছে, অন্যদিকে পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে পর্যটন শহর কক্সবাজার। গত কয়েক বছরে বিলীন হয়ে গেছে ৫ লাখেরও বেশি গাছ।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button