ঝিনাইদহের চোখঃ
ঠাকুরগাঁও জেলা ছোট হলেও এটি একটি প্রাচীন ঐতিহ্যসমৃদ্ধ জনপদ। এখানে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মানুষগুলো বহু বছর ধরে তাদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে আগলে রেখেছে। ঠাকুরগাঁও জেলার প্রাচীন পুকুর আর গড়গুলোর অস্তিত্ব আজও সুপ্রাচীন সভ্যতার নিদর্শন প্রকাশ করে।
ঠাকুরগাঁওয়ে ছড়িয়ে থাকা অনেক পুরাকীর্তির মধ্যে ‘জামালপুর জমিদারবাড়ি জামে মসজিদ’ অন্যতম। ঠাকুরগাঁও শহর থেকে পীরগঞ্জ যাওয়ার পথে বিমান বন্দর পেরিয়ে শিবগঞ্জহাট। হাটের তিন কিলোমিটার পশ্চিমে এই মসজিদটি অবস্থিত। এর নির্মাণশৈলী ও অপূর্ব কারুকাজ মুগ্ধ করে দর্শনার্থীদের। এটি বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর এর তালিকাভুক্ত একটি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা।
মসজিদ অঙ্গনে প্রবেশমুখে বেশ বড় সুন্দর একটি তোরণ রয়েছে। তাজপুর পরগনার জমিদারবাড়ি থেকে রওশন আলী নামক এক ব্যক্তি এ অঞ্চলে আসেন। তারই বংশধররা পরবর্তীতে এখানে জমিদারী পান। ১৮৬২ সালে জমিদারবাড়ির ভিত্তি স্থাপন করা হয়। বাড়িটির নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার আগেই ১৮৬৭ সালে মসজিদের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ফলে মসজিদের ব্যয়বহুল নির্মাণ কাজ শেষ হলেও জমিদার বাড়িটির নির্মাণ অসমাপ্ত থেকে যায়।
মসজিদটির শিল্পকলা দৃষ্টিনন্দিত, মনোমুগ্ধকর ও প্রশংসাযোগ্য। মসজিদে বড় আকৃতির তিনটি গম্বুজ আছে। গম্বুজের শীর্ষদেশ কাচ পাথরের কাজ করা। এই মসজিদের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো মিনারগুলো। মসজিদের ছাদে আটাশটি মিনার আছে। একেকটি মিনার ৩৫ ফুট উঁচু এবং প্রতিটিতে নকশা করা রয়েছে। গম্বুজ ও মিনারের মিলনে সৃষ্টি হয়েছে অপূর্ব সৌন্দর্য। এত মিনার সচরাচর কোন মসজিদে দেখা যায় না। মসজিদটির চারটি অংশ হলো মূল কক্ষ, মূল কক্ষের সঙ্গে ছাদসহ বারান্দা, ছাদবিহীন বারান্দা এবং ছাদবিহীন বারান্দাটি অর্ধ প্রাচীরে বেষ্টিত হয়ে পূর্বাংশে মাঝখানে চার থামের উপর ছাদ বিশিষ্ট মূল দরজা। খোলা বারান্দার প্রাচীরে এবং মূল দরজার ছাদে ছোট ছোট মিনারের অলংকার রয়েছে।
মূল কক্ষের বাইরের দিক থেকে পরিমাপ হচ্ছে ২৯×৪৭ ফুট এবং ছাদবিহীন বারান্দার পরিমাপ ২১×৪৭ ফুট। মূল কক্ষের কোণগুলো তিন থাম বিশিষ্ট। এর জানালা দুটি, দরজা তিনটি, কুলুঙ্গি দুটি। মসজিদটির ভিতরে দরজায়, বারান্দায় এবং বাইরের দেয়ালগুলোতে প্রচুর লতাপাতা ও ফুলের সুদৃশ্য নকশা রয়েছে। ভারতের উত্তর প্রদেশের হংসরাজ এবং তার পুত্র রামহিৎ মসজিদটির মূল কারিগর। দ্বারভাঙ্গা এলাকার কারিগরেরাও নির্মাণ কাজে অংশ নেয়।
যেভাবে যাবেন:
দেশের যেকোনো স্থান থেকে বাস, ট্রেন বা কার/মাইক্রোবাস নিয়ে যাওয়া যায় ঠাকুরগাঁওয়ে। ঠাকুরগাঁও শহর থেকে পীরগঞ্জ যাওয়ার পথে বিমান বন্দর পেরিয়ে শিবগঞ্জ হাটের তিন কিলোমিটার পশ্চিমে জামালপুর জমিদারবাড়ি জামে মসজিদ।
