কালীগঞ্জটপ লিড

ঝিনাইদহে শখ থেকে পেশা

ঝিনাইদহের চোখঃ

৭ বছর আগের কথা। শখ করে এক এক করে ৬ জোড়া দেশীয় জাতের কবুতর কিনে বাড়িতে আনেন রবিউল ইসলাম। শান্তি প্রতিক কবুতরে প্রতি তার ব্যাপক আগ্রহ ছিল। ৬ জোড়া কবুতর যখন একে একে বাচ্চা তুলতে শুরু করলো তখন রবিউল ইসলামের মন ভরে গেলে।

একজোড়া কবুতরের বাচ্চা বিক্রি শুরু করলেন ১৬০ টাকায়। তখন ভাবলেন কবুতর যদি বাণিজ্যিক ভাবে পালন করা যায় তাহলে তো বেশ লাভ হবে। এরপর বাণিজ্যিক ভাবে শুরু করলেন কবুতর খামার। এখন তার খামারে সিরাজী, ম্যাগপাই, আউল, জালালী, গিরিবাজ, লোটন,লাক্ষা,কিং,ঘিয়ে চুন্নী,হোয়াইট কিংসহ দেশী বিদেশী প্রায় ৫০০ টি কবুতর রয়েছে।

অর্থের হিসাব করলে প্রায় ৩ লাখ টাকার কবুতর রয়েছে তার। গত ৩ বছরে ২ লাখ টাকার কবুতর বিক্রি করেছেন এবং বিভিন্ন জনকে উপহার দিয়েছেন। রবিউল ইসলাম ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার কাকলাশ গ্রামের মৃত ছবেদ আলী বিশ্বাসের পুত্র। ইতোমধ্যে সে যশোর এম এম কলেজ থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে মাষ্টার্স শেষ করে কবতুরের খামার করেছেন।

সরেজমিনে গিয়ে কাকলাশ গ্রামে রবিউল ইসলামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বড় একটি টিনের ছাউনির ঘর। চারপাশে তারের নেট দিয়ে ঘেরা। ভিতরে বসানো হয়েছে কাঠের তৈরী প্রায় ৬ শতাধিক কবুতরের খোপ। আকারে বড় বিদেশী কবুতর গুলোর জন্য রয়েছে আলাদা লোহার খাচা। নিচে দেয়া আছে খাবার ও স্বচ্ছ পানি।

কবুতরগুলো প্রয়োজন মত যে যার মত করে খাবার খাচ্ছে আবার উড়ে গিয়ে বসছে নিজের কামরাতে। সেখানে বসে কেউ ডিম তা দিচ্ছে। কেউ নিজের বাচ্চাকে খাইয়ে দিচ্ছে। আবার কেউ অপরের সাথে হট্টগোলে ব্যস্ত। সিরাজী, ম্যাগপাই, আউল, জালালী, গিরিবাজ, লোটন, লাক্ষা,কিং,ঘিয়ে চুন্নী,হোয়াইট কিংসহ দেশী বিদেশী নানা জাতের নানান রঙের কবুতরগুলো ঘরের মধ্যে ভিন্ন স্বরে বাকবাকুম ডেকে বাড়ি মাথায় করছে।

রবিউল ইসলাম জানান, এম.এম.কলেজ থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে মাষ্টার্স শেষ করেছেন। ছোটবেলা থেকেই যখন তিনি মাধ্যমিক পর্যায়ে লেখাপড়া করতেন তখন থেকে বাড়িতে অল্প করে হলেও দেশি জাতের কবুতর পালন করতেন। এটা দিয়ে একদিকে সখ মিটতো। অন্যদিকে কিছু পয়সাও আসতো। যা দিয়ে নিজের লেখাপড়ার খরচ চালাতেন।

তখন ভাবতেন লেখাপড়া শেষ করে সুযোগ পেলেই কবুতরের বড় খামার করবেন। সেই সখ থেকেই আজ হয়েছেন একজন কবুতরের খামারী। লেখাপড়া শিখে এখনো চাকরী হয়নি। তাই বলে ঘুরে বেড়িয়ে লাভ নেই। ফলে অনেক চিন্তা করেই কবুতরের খামার করেছেন। পাশাপাশি বাড়ির পাশের জমিগুলোতে নানান ফসলের চাষ করে নিজের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছেন।

তিনি বলেন, দেশী ও বিদেশী বিভিন্ন জাতের কবুতর কুষ্টিয়া ও যশোর,ফরিদপুরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে সংগ্রহ করেছেন। বর্তমানে তার বাড়িতে কমপক্ষে ৩০ জাতের প্রায় ৫ শতাধিক কবুতর রয়েছে। তিনি কমপক্ষে দেড় লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছেন। যে কবুতর থেকে এখন প্রতি মাসে প্রায় ৮ থেকে ১০ হাজার টাকার বাচ্চা বিক্রি করতে পারছেন।

কবুতরের ঘর সব সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হয়। তা না হলে রোগ জীবানু ছড়ায়। শীত মৌসুম টা কবুতরের জন্য খুব খারাপ সময়। এ সময়টা কবুতরের রোগ ব্যাধি বেশি হয়। প্রতি ৩ মাস পর পর প্রতিষেধক হিসেবে ভ্যাকসিন দিয়ে থাকেন। তিনি জানান, এক জোড়া কবুতর বছরে কমপক্ষে ৬-৭ জোড়া বাচ্চা দেয়।

এখন প্রতি জোড়া দেশি জাতের কবুতরের বাচ্চা কমপক্ষে ১৬০ টাকায় বিক্রি করছেন। আর বিদেশী জাতের বাচ্চাগুলোর দাম অনেক বেশি। তার কাছে ৮-১০ হাজার টাকা জোড়া কবুতরও রয়েছে। এছাড়াও তার বাড়িতে বিভিন্ন জাতের ঘুঘু,টিয়া,লাভ বার্ড পাখিও রয়েছে। বাড়ি থেকে ব্যবসায়ীরা এসে বাচ্চা কিনে নিয়ে যাচ্ছে। রবিউল জানান,আগামীতে তার কবুতরের খামারটি আরো বড় করার চিন্তা করছেন।

রবিউলের ভাই আতাউর রহমান জানান,ছোটবেলা থেকে রবিউল পাখি ও কবুতর পালন করে আসছে। এজন্য অনেক সময় পরিবারের সদস্যদের কাছে গালমন্দও শুনতে হয়েছে তাকে। কিন্তু তার সখের কাজ কখনও বন্ধ করেনি সে। আজ তার বাড়িতে কবুতরের খামার করেছে। সেখান থেকে এখন বেশ পয়সাও রোজগার হচ্ছে। বাড়ির সকলে এখন তার কাজে সহযোগীতা করছেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button